প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা থানার দায়েরকৃত মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন শুনানির তারিখ দুদিন পিছিয়ে ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
জামিন শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আদালতে উত্তেজনা তৈরি হলো রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষে। রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি পেছানোর কথা বলার পর আদালতে হট্টগোল করেছেন বিএনপি নেতার আইনজীবীরা। পরে বিচারক আগামীকাল বুধবার জামিন শুনানির তারিখ দেন। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় গতকাল সোমবার শুনানির কথা ছিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদেরের আদালতে। তবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু ‘এজলাসে নেই’ জানিয়ে সময় চান পুলিশের সহকারী কমিশনার মুত্তাকিন এবং অতিরিক্ত পিপি তাপস পাল।
ফখরুলের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার তখন বলেন, তাহলে আজ বিকালে শুনানির জন্য সময় দেওয়া হোক। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী অভিযোগপত্র জমার আগের শুনানিতে পিপির উপস্থিতির দরকার নেই দাবি করে তিনি বলেন, প্রসিকিউশন পুলিশ রাষ্ট্রপক্ষে এ ধরনের শুনানি করবেন বলে নিয়ম রয়েছে।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নাল আবেদীন এবং জামিন আবেদনে আইনজীবী হিসাবে স্বাক্ষরকারী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ ‘এখনই শুনানি হোক’ বলে অনুরোধ করেন।
বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের তখন বলেন, আসামি পক্ষকে কেন জানালেন না? এটি তো নিয়ম লঙ্ঘন। তিনি আবার ‘সময় আবেদন মঞ্জুর করব এবং পরে তারিখ দেব’ বললে ফখরুলের আইনজীবীরা তখনই তারিখ চান। বিচারক সে আর্জিতে সায় না দিয়ে বলেন, কবে তারিখ পড়বে এটা পরে জানবেন।
ফখরুলের আইনজীবীরা তখন এজলাসে বসেই তারিখ দিয়ে দিন বলে চাপাচাপি করতে থাকেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আপত্তি জানানো হলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
ফখরুলের অন্যতম আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইয়োর অনার, আপনি চাইলে তাকে (ফখরুল) অ্যাড ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) জামিন দিয়ে দিতে পারেন। পরে মূল জামিন শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারিখ রাখতে পারেন। বিচারক বলেন, আমি পরে এজলাস থেকে নেমে তারিখ রাখব। এতে আপত্তি জানাতে থাকেন ফখরুলের আইনজীবীরা। এ পর্যায়ে বিচারক রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তারিখ দেবেন জানালে আবার আপত্তি তোলেন ফখরুলের আইনজীবীরা।
ফখরুলের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, আদালত এ রকম ‘অসহায়’, তা ভাবতে আমাদের কষ্ট হয়। আমরা আদালতের অসহায়ত্বে বিশ্বাস করতে চাই না।
এর ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান পিপি আবদুল্লাহ আবুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বিচারক ফয়সাল আতিক। কিন্তু আবুকে পাওয়া না যাওয়ার পর বিচারক বলেন, আমি তাহলে ১০ মিনিটের জন্য আদালত মূলতবি রাখলাম। আজই এজলাসে বসে তারিখ দেব।
আধা ঘণ্টা পরে বিকাল পৌনে ৪ টায় বিচারক এজলাসে আসন গ্রহণ করেন বিচারক। তখন তিনি ফখরুলের জামিন শুনানি বুধবার শুনবেন জানিয়ে অন্য মামলার শুনানি শুরু করেন। এ সময় বিএনপি সমর্থিত প্রায় দুইশ আইনজীবী এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে এসব ঘটনা চলার সময় মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন বেদীর সামনে একটি বিস্ফোরণ ঘটে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ–কমিশনার (লালবাগ) জাফর হোসেন বলেন, একটি ককটেল বিস্ফারণের ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করে দেখছি কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।