ফকির আলমগীরকে হারানোর চার বছর

| বৃহস্পতিবার , ২৪ জুলাই, ২০২৫ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকীকে ঘিরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন। ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক সমর বড়ুয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ১০টায় খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে ফকির আলমগীরের কবরে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচি। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে। দুপুরে খিলগাঁওয়ের বাসায় গরিবদের মধ্যে খাবার বিতরণ এবং বিকেলে মাটির মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ফকির আলমগীরের জন্মস্থান ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা গ্রামেও এদিন মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।

ফকির আলমগীরের জন্ম ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙা থানার কালামৃধা গ্রামে। কালামৃধা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। এর মধ্যেই ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফকির আলমগীর জড়িয়ে যান বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে। সেই সূত্রে ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে তার গান আর সংগ্রামের জগতে প্রবেশ। ঠিক তার পরপরই আসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সেই উত্তাল সময়। গানের শিল্পী ফকির আলমগীর তাতেও কণ্ঠ মেলান।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। তার বয়স তখন ২১ বছর। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে কলকাতার নারিকেল ডাঙায় শরণার্থী শিল্পী গোষ্ঠীতে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। এছাড়া ‘মন তুই দেখলি না রে’, ‘কালো কালো মানুষের দেশে’, মায়ের একধার দুধের দাম’, ‘মন আমার দেহ ঘড়ি’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’, ‘ঘর করলাম না রে আমি’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’, ‘বনমালী তুমি’সহ তার গাওয়া বহু গান আশি ও নব্বইয়ের দশকেও দারুণ জনপ্রিয় ছিল। ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীত শিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি। তিনি নিয়মিত লেখালেখিও করতেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই রয়েছে তার। মহামারীর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ২৩ জুলাই মারা যান ফকির আলমগীর। ৭১ বছর বয়সে থেমে যায় একাত্তরের এই কণ্ঠযোদ্ধার গানের মিছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেমসের কনসার্টের অর্থে সহায়তা করা হবে ক্ষতিগ্রস্তদের
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ৬.৬৭ কোটি টাকা