নিত্যদিনের ব্যবহার করা প্লাাস্টিক মানব জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর; এর ভয়াবহতা বুঝাতে পায়ে হেঁটে ভারতের নাগপুরের রোহান আগরওয়াল বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন, তিন বছর ধরে হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছেছেন চট্টগ্রামে। গতকাল শনিবার আজাদী কার্যালয়ে এসেছিলেন তার পথ থেকে পথে ঘুরে বেড়ানোর কারণ জানাতে।
তিনি সিকিম প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও বৈচিত্র্যের মাধ্যমে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে রোহান আগরওয়াল বাংলাদেশের ৬৩টি জেলা ভ্রমণ শেষ করে এসেছেন চট্টগ্রামে। এর মধ্যে তিনি বিভিন্ন বয়সী মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। পথ চলতে চলতেই তার পরিচয় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে। পথের পরিচিত হওয়া মানুষেরাই দিচ্ছেন তাকে সহযোগিতা, করেছেন থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থাও।
বাংলাদেশ আর ভারতের মানুষের মাঝে তেমন পার্থক্য খুঁজে পাননি জানিয়ে রোহান বলেন, এদেশের মানুষকে আমার আত্মীয়স্বজন বলে মনে হয়েছে। কাঁটাতার কখনো আত্মিক সম্পর্ককে রুখে দিতে পারে না।
রোহান জানান, পরিবেশ ও প্রকৃতির গুরুত্ব জীবনে সমান। সহজলভ্যতার কারণে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের জন্য যা মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক প্রজনন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে, শ্বাস–প্রশ্বাসের অসুবিধা তৈরি করে। প্লাস্টিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নসহ জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। প্লাস্টিক দিয়ে পৃথিবীর পুরো জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই ক্ষতির হাত থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতেই তার এ যাত্রা।
রোহান বলেন, পরিবেশ থেকে খাদ্য, পানি, বায়ু পেয়ে থাকি আমরা। অথচ এর বিনিময়ে আমাদের অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে এবং অতিরিক্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহারে পরিবেশ আজকে ভয়ংকর ক্ষতির মুখে। তাই পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে মানুষকে সচেতন করতে, বিশেষ করে তরুণদেরকে সচেতন করতে আমি এই ভ্রমণ শুরু করেছি। ভ্রমণ পথে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের পাশাপাশি কথা বলেছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও। বোঝানোর চেষ্টা করছেন প্লাস্টিক ও পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা। প্রয়োজনে সহায়তা নিচ্ছেন বাংলাদেশি দোভাষীর। সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যমকর্মী ও সচেতন নাগরিকদের সঙ্গেও। তার আন্দোলন ও পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ আলোচনা ছাড়াও সহায়তা নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় বিষয়ে।
প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার এবং এর বিপজ্জনক প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের রোহান আগরওয়াল। পরিবেশ রক্ষায় পর্যায়ক্রমে বিশ্ব ভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গা স্নান শেষে গঙ্গার তীর থেকে শুরু হয় তার হাঁটা। তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। সেখান থেকে রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চন্ডিগড়, হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, কর্ণাটক, কেরালা ও গোয়া হয়ে ভারতের মোট ২৭টি রাজ্য পরিভ্রমণ শেষে ভ্রমণ শেষে ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্ত পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণ শেষ করেন এ যুবক। এর আগে নেপালের কিছু অংশও ঘুরে এসেছেন তিনি।
তার পরিবারে মা–বাবা ও ছোট বোন আছে। এরই মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নেন প্লাস্টিক দূষণে জর্জরিত বিভিন্ন দেশের শহরগুলো ঘুরে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিজ উদ্যোগে এ যাত্রা শুরু করেন রোহান আগরওয়াল। রোহান বলেন, আমি কখনো হেঁটে, কখনো কারও মাধ্যমে সহযোগিতা নিয়ে এ ভ্রমণ করছি। তিনি আরও বলেন, এ পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য নয়। সব প্রাণী ও উদ্ভিদেরও। তাই পরিবেশের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এটা সব মানুষের দায়িত্ব। আমি বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্ম যদি পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতন হয়, তাহলে অনেক কিছু বদলে যাবে। আগামী পাঁচ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার ২০টি দেশ ভ্রমণ করবেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে আমি মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে বের হব। সর্বশেষ পৃথিবীর শীতলতম কেন্দ্রস্থল সাইবেরিয়াতে ভ্রমণ শেষ করব।