নগরীতে বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকলিয়া থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহূল আমিন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. শহীদ আলম লেদু (৩০), জাহাঙ্গীর আলম (৩০), গিয়াস উদ্দিন (২৯) ও মো. রায়হান (২৮)। আসামিদের কাছ থেকে ১টি দেশিয় এলজি ও ২টি টিপ ছোরা উদ্ধার করা হয়। ঘটনার শিকার শামীম হাসান (৩৭) বেসরকারি একটি ব্যাংকের নগরীর হালিশহর শাখার সিনিয়র অফিসার।
ওসি রুহূল আমীন বলেন, চক্রটির সদস্যরা বিত্তশালীদের টার্গেট করে কৌশলে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। সেই নম্বরে চক্রের কোনো নারী সদস্য বিভিন্ন পরিচয়ে কথা বলে ও যোগাযোগ করে। কয়েকদিন কথা বলার পর গড়ে তুলে প্রেমের সম্পর্ক। এক পর্যায়ে দেখা করার কথা বলে আনা হয় নির্দিষ্ট জায়গায়। পরে সেখানে জিম্মি করে বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করে মুক্তিপণ। ব্যাংক কর্মকর্তাকেও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করেছিল তারা।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে শামীম হাসানের সাথে অজ্ঞাত এক তরুণী ক্লায়েন্ট পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। কথার সূত্র ধরে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুরু হয় ফোনালাপ। কয়েকদিন কথা বলার এক পর্যায়ে বাসায় যাওয়ার দাওয়াত দেয় তরুণীর। গত ৫ মার্চ তরুণীর দেয়া ঠিকানা বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকায় গিয়ে মেয়েটিকে ফোন করেন শামীম। এ সময় ওই তরুণী তাকে বাসায় নেওয়ার জন্য রায়হান নামে একজনকে পাঠাচ্ছে বলে জানায়। কাজের ছেলে পরিচয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামি রায়হান তাকে ফ্লাইওভারের নিচ থেকে নিয়ে যায় চান্দারপুকুর পাড় বিসমিল্লাহ টাওয়ারের পেছনে। সেখান থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ৮-১০ জন তাকে ঘিরে ফেলে। তারপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। ওই তরুণীর সাথে প্রেম আছে বলে তাকে বিভিন্ন খারাপ ইঙ্গিত করে তারা। একপর্যায়ে তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার কথা বলে ভয় দেখানো হয়। তার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তিনি প্রাণভয়ে তার (ভুক্তভোগী) ভাই সাইদুর রশিদকে ফোন করে বিষয়টি জানান। পরবর্তীতে ৪টি বিকাশ নম্বরে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বাকলিয়া থানায় এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ঘটনায় জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি মো. রুহুল আমিন বলেন, বিভিন্ন সময়ে ১০ থেকে ১৫ জনকে একইভাবে জিম্মি করে টাকা আদায় করার কথা গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছে। এছাড়াও তারা বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কোতোয়ালী এলাকায় ১৫০টিরও বেশি চুরি ও ছিনতাই কাজে লিপ্ত থাকার কথাও জানিয়েছে। এ সিন্ডিকেটের আরো দশ জনের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরেছি। কয়েকজন নারীও আছে। চক্রের কয়েকজনের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় আরও মামলা আছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।