প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪–১৯৮৮)। কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক। তিনি কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু। প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে তার পিতার কর্মস্থল বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার রাজপুরে। তাঁর পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র এবং তার মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে প্রবাসীতে ‘শুধু কেরানী’ আর এপ্রিল মাসে ‘গোপনচারিণী’ গল্পের মধ্যদিয়ে তাঁর লেখালেখি জীবন শুরু করেন। যদিও সেখানে তার নাম উল্লেখ করা ছিল না। সেই বছরেই কল্লোল পত্রিকায় ‘সংক্রান্তি’ নামে আর একটি গল্প প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁর মিছিল (১৯২৮) এবং পাঁক (১৯২৬) নামে দুটি উপন্যাস বেরোয়। পরের বছর বিজলী পত্রিকায় গদ্যছন্দে লেখেন ‘আজ এই রাস্তার গান গাইব’ কবিতাটি। প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম কবিতার বই ‘প্রথমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। বৈপ্লবিক চেতনাসিক্ত মানবিকতা তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রথম জীবনে তার ছোটোগল্পের তিনটি বই বেরোয় – ‘পঞ্চশর’, ‘বেনামী বন্দর’ আর ‘পুতুল ও প্রতিমা’। প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি নিয়মিত কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান–ভিত্তিক গল্প–উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার বিজ্ঞান সাহিত্য রচনার শুরু ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছোটদের জন্যে লিখেন ‘পিঁপড়ে পুরাণ’। এটিই তার প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচনা। ‘কুহকের দেশে’ গল্পে তার কল্পবিজ্ঞান ও এডভেঞ্চার কাহিনীর নায়ক মামাবাবুর আত্মপ্রকাশ। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘ড্র্যাগনের নিঃশ্বাস’ প্রকাশিত হলে মামাবাবু পাঠক মহলে জনপ্রিয় হন। তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প ও উপন্যাস উল্লেখযোগ্য : ছোটোগল্প : ‘কালাপানির অতলে’, ‘দুঃস্বপ্নের দ্বীপ’, যুদ্ধ কেন থামল, মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী, হিমালয়ের চূড়ায়, আকাশের আতঙ্ক, অবিশ্বাস্য, লাইট হাউসে, পৃথিবীর শত্রু, মহাকাশের অতিথি, শমনের রং সাদা। বড়ো গল্প ও উপন্যাস : পিঁপড়ে পুরাণ, পাতালে পাঁচ বছর, ময়দানবের দ্বীপ, শুক্রে যারা গিয়েছিল, মনুদ্বাদশ, সূর্য যেখানে নীল। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি–লিট ডিগ্রিতে ভূষিত হন। তিনি ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মে মৃত্যুবরণ করেন।