প্রায় ৫ কোটি টাকার নষ্ট গম রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করার প্রক্রিয়া

কর্ণফুলীতে ডুবে যাওয়া বার্জ থেকে এগুলো খালাস করা হচ্ছে, শুকানো হচ্ছে পতেঙ্গায় নদীর পাড়ে

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলীতে তলিয়ে যাওয়া প্রায় ৫ কোটি টাকার গম রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করার প্রক্রিয়া চলছে। ডুবে যাওয়া একটি বার্জ থেকে গমগুলো তুলে পতেঙ্গা এলাকায় রোদে শুকানো হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব গম জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার এমভি সিদ্দিক আহমদ২ নামের একটি বার্জে করে গমের একটি চালান পরিবহন করা হচ্ছিলো। বার্জে করে ভোগ্য পণ্য খালাসের কোনো সুযোগ না থাকলেও আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের এন মোহাম্মদ ট্রেডিং খরচ সাশ্রয়ের জন্য বার্জে গম বোঝাই করে। আমদানিকারক, শিপিং এজেন্ট, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর, সিএন্ডএফ সব একই বৃত্তের হওয়ায় গম খালাসে কোনো ধরনের নিয়ম কানুন মানা হয়নি। অতিরিক্ত গম বোঝাইয়ের কারণে গত শুক্রবার বার্জটি কর্ণফুলী নদীতে ডুবে যায়। এতে বার্জে থাকা বিপুল পরিমাণ গম পানিতে তলিয়ে যায়। বার্জের গমের পরিমাণ নিয়ে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। আমদানিকারকের পক্ষ থেকে বন্দরকে জানানো হয়েছে ৬শ’ টন গম ছিল। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বার্জে ১ হাজার টনের বেশি গম ছিল।

বার্জটি কর্ণফুলীতে বন্দরের ৬ নম্বর জেটির বিপরীতে ডুবে যায়। জোয়ারের সময় বার্জটি পুরোপুরি তলিয়ে যায়, ভাটার সময় উপরের দিকে এর কিছু অংশ দেখা যায়। ‘বার্জটি বন্দরের অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে’ উল্লেখ করে এটিকে দ্রুত সরিয়ে নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ বার্জের মালিক এসএস শিপিং লাইন্সকে ইতোমধ্যে তাগাদা দিয়ে পত্রও দিয়েছে। কিন্তু এসএস শিপিং লাইন্স বার্জটি না সরিয়ে গ্রেভের সাহায্যে আগে নষ্ট গমগুলো খালাস শুরু করে এবং সেগুলো পতেঙ্গার ইনকনট্রেড কন্টেনার ডিপোর পেছনে নদীর পাড়ে রোদে শুকাচ্ছে।

গতকাল সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নষ্ট গমগুলো থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এক হাজার টন গম হিসাব করলেও দাম প্রায় ৫ কোটি টাকা। এসএস শিপিংয়ের ম্যানেজার সোহেল সাত্তার, তানভির আমান এবং আলমগীর হোসেন গমগুলো খালাস থেকে শুকানো পর্যন্ত সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, বন্দরের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বন্দরের জায়গায় গম শুকানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি অবৈধ বাহন নদীতে ডুবে অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। অর্থাৎ বন্দর কর্তৃপক্ষ বার্জ সরিয়ে

নিতে শুধুমাত্র পত্র দিলেও এর মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। উপরন্তু বন্দরের জায়গায় নদী থেকে তুলে আনা গম শুকানোর মৌখিক অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।

আমদানিকারক এন মোহাম্মদ ট্রেডিং এবং বার্জের মালিক এসএস শিপিং মূলতঃ একই মালিকানাধীন। খাতুনগঞ্জের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নামের এই ব্যবসায়ী বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সোহেল সাত্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বার্জটি স্যালভেজ করে ডকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বার্জের একটি হ্যাজে সামান্য পানি ঢুকেছিল। অন্যগমগুলো ভালো ছিল। সেগুলো আমরা খালাস করে নিয়ে এসেছি। ভেজা গম রোদে কেন শুকানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু গমে ময়েশ্চার এসেছে, সেগুলো রোদে দিয়েছি। বার্জটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলা হলেও গতকাল দুপুরেও ভাটার সময় এর সামান্য অংশ দেখা গেছে। অবশ্য সেখানে ক্রেণ ও গ্রেভ দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে।

বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাসের লাইটারেজ জাহাজ চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জি এম খান বলেন, ‘আমরা কখনো কোনো ধরনের বার্জ বরাদ্দ দিইনি, এগুলো কেমনে চলাচল করে তাও আমরা জানি না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় সোমবার
পরবর্তী নিবন্ধওয়ার্ডের চিকিৎসক দিয়েই চলছে বহির্বিভাগের সেবা