আনোয়ারায় অবস্থানরত হাতির পালটি প্রতিরাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি ও আতঙ্ক তৈরি করছে। খাবারের সন্ধানে বৈরাগ, বটতলী, হাজিগাঁও, গুয়াপঞ্চক, বড়উঠান ও কেইপিজেড এলাকায় রাতে তো বটেই, ইদানীং দিনের বেলায়ও লোকালয়ে নেমে আসছে হাতিগুলো। ফলে আনোয়ারা, কেইপিজেডসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষের মাঝে হাতি আতংক বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অতি দ্রুত হাতিগুলো সরিয়ে নিতে আবারো জোর দাবি জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত বুধবার মধ্যরাতে হাতিগুলো বটতলী শাহ মোহছেন আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ ও আশপাশের বসতবাড়িতে হানা দিলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর ইআরটি’র সদস্য ও স্থানীয়রা হাতিগুলো পাহারা দিয়ে পাহাড়ে উঠিয়ে দেয়। তার আগে গত মঙ্গলবার রাতে কেইপিজেড ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। হাতিগুলো এসময় বিভিন্ন প্রজাতির নারিকেল ও বনজ ফলদ গাছ বিনষ্ট করে। তাছাড়া গত দুই সপ্তাহ ধরে হাতিগুলো উপজেলার বৈরাগ, গুয়াপঞ্চকসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতে হানা দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করে স্থানীয়দের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করছে বলে জানা গেছে। ইদানীং ফসলি মাঠে দিনের বেলায়ও হাতিগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় বটতলীর বাসিন্দা খোরশেদ আলম জানান, তিনবছর আগে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় বটতলী রুস্তম হাট বাজারে আমার মামাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর বটতলী কলেজ মাঠে খেলা দেখতে গিয়ে স্থানীয় আরেক যুবক হাতির আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। গত বছর বটতলী আবাসন প্রকল্পে এক বৃদ্ধ মহিলাকে হাতি নির্মমভাবে হত্যা করে। এভাবে এলাকার অনেক মানুষ হাতির আক্রমণের শিকার হয়েছে। রাত হলে এলাকার মানুষের নির্ঘুম রাত কাটে হাতির ভয়ে। স্থানীয়দের ফসলি জমি, বাগান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে আক্রমণ করে গত ৭/৮ বছর ধরে তাণ্ডব চালালেও হাতিগুলো সরিয়ে নিতে বন বিভাগের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ আর আতঙ্ক বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। আমরা এলাকাবাসী অতি দ্রুত হাতিগুলো সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
কোরিয়ান ইপিজেড এর উপ–মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান জানান, গত আট বছরে হাতিগুলোর তান্ডবে কেইপিজেড এর লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। হাতিগুলো দিনে–রাতে সমান তালে কেইপিজেড এ সম্পদের ক্ষতি করে চলেছে। হাতির আক্রমণে বিনিয়োগকারী আহত হওয়ার পর বিনিয়োগ হুমকিতে পড়েছে। হাতির কারণে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী হাতি আতঙ্কে রয়েছে।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক শতাধিক মানুষ হাতির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছে। আমরা আশা করছি এ ব্যাপারে বন বিভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন।