ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত দেশের জনগণ যোগ্য ও নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের চট্টগ্রামের প্রার্থীরা। নির্বাচিত হলে নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা। এসময় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে প্রত্যেকই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তারা। চট্টগ্রামের ১৬ আসন থেকে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ২৩১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেন ১৪৩ জন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের বক্তব্য তুলে ধরা হল।
আসলাম চৌধুরী : বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে। ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার পর দেশের জনগণ যোগ্য ও নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। তাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। তিনি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বহু নেতাকর্মী আহত ও নিহত হয়েছেন। নিজেও ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ আট বছর কারাবরণ করেছি। এসব ত্যাগের ধারাবাহিকতায় দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, যা সীতাকুণ্ডবাসীর প্রতি সম্মানের বহিঃপ্রকাশ। শিল্পাঞ্চল হিসেবে সীতাকুণ্ড দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নির্বাচিত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও সুসংহত করে উদ্যোক্তাদের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন তিনি।
সাঈদ আল নোমান : বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–১০ আসনের বিএনপি প্রার্থী সাঈদ আল নোমান। সাংবাদিকদের তিনি বললেন, জনগণের সেবার শপথ নিলাম, শপথটা যেন আমি শেষদিন পর্যন্ত মনে রাখি। তিনি বলেন, রাজনীতি, মনোনয়ন, নির্বাচন– এগুলো আমার কাছে শুধু ক্ষমতার আবাহন নয়। আমি মনে করি, মনোনয়নপত্র দাখিলের মাধ্যমে কিংবা এ মনোনয়ন পাবার মাধ্যমে আমার কাঁধে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ভর করে বসল। আমি দেশবাসী এবং চট্টগ্রামের মানুষের কাছে দোয়া চাই, সমর্থন চাই। আমি মনে করি মনোনয়ন পত্র দাখিলের মাধ্যমে আমরা আজ জনগণের সেবার শপথ নিচ্ছি। আমি যেন ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরভাবে প্রচার চালিয়ে যেতে পারি এবং জনগণ যদি আমাকে বিজয়ী করেন, তাহলে আমি যেন যে সেবার শপথ আজ নিলাম, সেই সেবার দায়িত্ব ও কর্তব্যটা সুচারুরূপে পালন করতে পারি। সেবার শপথটা যেন আমি শেষদিন পর্যন্ত মনে রাখি এবং দায়িত্বটা পালন করে যেতে পারি, এতটুকুই আমি বলব। এর বাইরে জয়–পরাজয়ের কোনো চিন্তা আমার মাথায় আসছে না। আমার মাথায় শুধু জনসেবার বিষয়টাই আসছে। কারণ, জনসেবা হচ্ছে পলিটিঙের এঙটেনশন অথবা উল্টোভাবে বললে পলিটিঙ হচ্ছে জনসেবারই একটা এঙটেনশন। আমি যদি জনসেবাটা সুন্দরভাবে করতে পারি, তাহলে পলিটিঙের সিংহভাগ কাজ হয়ে যাবে।
আবু সুফিয়ান : চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–৯ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান। এসময় তিনি বলেন, গণতন্ত্রের উত্তরণে আগামী নির্বাচন জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে গণতন্ত্র ছাড়া কোন বিকল্প নাই। তাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা চাই, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিবে এবং জনগণের সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ।
এরশাদ উল্লাহ : বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম ৮ আসনের ( চান্দগাঁও – পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ আংশিক– বোয়ালখালী) বিএনপি প্রার্থী ও নগর বিএনপি’র আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন পর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশে আইনের শাসন জারি হবে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম ৮ আসনের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
ডা. আবু নাছের : বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম ৮ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. আবু নাছের। তিনি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার করতেই আমি নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি এবং জনগণই আমার মূল নিরাপত্তা। তবে বিভিন্ন মামলার আসামি ও সন্ত্রাসীরা যে এলকায় অবাধ বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছে, তা প্রশাসনের দুর্বলতারই প্রমাণ। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
সরওয়ার আলমগীর : জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–২ (ফটিকছড়ি) আসনের বিএনপি প্রার্থী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ সরওয়ার আলমগীর। তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান আমার উপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন তার জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি এ বিশ্বাসের মর্যাদা রাখব। ফটিকছড়ি আসনটি উনাদের উপহার দেব ইনশাআল্লাহ। আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
নাজমুল মোস্তফা আমিন : বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–১৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল মোস্তফা আমিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের আসার পর থেকে বিএনপির প্রতি মানুষের ভালোবাস আরো বেশি বেড়ে গেছে। সেই ভালোবাসার জোয়ারে পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম–১৫ আসনের জনগণ। আশাকরি ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ ধানের শীষের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
শফিউল আলম : আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–১১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী শফিউল আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম–১১ আসনের সাধারণ মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। জনগণের ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে ইনশাআল্লাহ একটি কল্যাণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখতে চাই।
অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী : চট্টগ্রাম–১০ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নিকট মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষে প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী বলেন, চট্টগ্রাম–১০ আসনকে বাংলাদেশ একটি মডেল আসন হিসেবে উপহার দিতে চাই। ১০ আসনের সাধারণ মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। জনগণের ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে ইনশাআল্লাহ একটি ইনসাফ ভিত্তিক কল্যাণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখতে চাই।”
ডা. একেএম ফজলুল হক : বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–৯ আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ডা. একে এম ফজলুল হক। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম–৯ আসনের সাধারণ মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। জনগণের ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে একটি ইনসাফ ভিত্তিক, কল্যাণমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, ইনশাআল্লাহ।
মো. মছিউদ্দৌলা : বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম–৪ আসনে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী মো. মছিউদ্দৌলা। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকা সীতাকুণ্ডে শত, শত কারখানা গড়ে উঠেছে। হাজার, হাজার শ্রমিক সেখানে কর্মরত আছে। এসব শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের ন্যূনতম সম্মানজনকভাবে বাঁচার অধিকারটুকুও রাষ্ট্র দিতে পারছে না। আমি একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে দীর্ঘসময় ধরে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আছি। সীতাকুণ্ডের মানুষ শান্তিপ্রিয়, অসামপ্রদায়িক। আমরা সিপিবির পক্ষ থেকে একটি অসামপ্রদায়িক প্রগতিশীল মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, সীতাকুণ্ডে সর্বস্তরের মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে।












