প্রার্থীদের ইশতেহারের কেন্দ্রবিন্দু আবাসন ও পরিবহন সংকট

শামীম হোসাইন, চবি | রবিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। আয়তনে বৃহত্তম ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিদ্যাপীঠের নিত্যকার ভোগান্তির নাম আবাসন ও পরিবহন সংকট। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চাকসু নির্বাচনে তাই দুই খাতই প্রার্থীদের ইশতেহারের মূল অগ্রাধিকার হিসেবে উঠে এসেছে।

চবিতে অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ১১ হাজার এবং পুরুষ শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে ছেলেদের হলে আসন মাত্র ৩৬৮৭টি। মেয়েদের হলে সে সংখ্যা ২৬৪১টি। তাছাড়া অনেক রুমই দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের অনুপযোগী। ফলে মাত্র ২২২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। মেয়েদের হলে ডাবলিং ব্যবস্থা থাকায় সামান্য অতিরিক্ত সুযোগ থাকলেও সামগ্রিক সংকট কাটেনি।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা রয়েছে ৪৪ শতাংশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫ শতাংশ, জাহাঙ্গীরনগরে ৯৯ শতাংশ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ শতাংশ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাবিপ্রবিতে প্রায় ৩৩ শতাংশ, বুয়েটে ৫৩ শতাংশ। গড়ে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেলেও চবিতে সেই হার মাত্র ২২ শতাংশ। শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম শাটল ট্রেন। প্রতিদিন ৯ জোড়া ট্রেন শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করে, ছুটির দিনে চলাচল করে ৩ বার। কিন্তু শিডিউল বিপর্যয়, বগি স্বল্পতা, ফ্যানলাইট অচল, বহিরাগতদের দখল এবং নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় নিয়মিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস সার্ভিস চালুর দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ইকার চালু হলেও সেগুলো চক্রাকারে চালানো যাচ্ছে না। আবার প্রয়োজন মতে শিক্ষার্থীরা ইকারের সন্ধান পায় না।

চাকসুর ২৬টি পদের মধ্যে যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং সহসম্পাদকের পদকে তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। এই দুই পদে যথাক্রমে ১৭ ও ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৩টি প্যানেলের ইশতেহারে পরিবহন ও আবাসন সংকট নিরসনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রথমেই বলা হয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া ডেমু ট্রেনের জায়গায় নতুন শাটল ট্রেন চালুর দাবি। পাশাপাশি বিদ্যমান শাটল ট্রেনগুলোতে বগি বৃদ্ধি, প্রতিটি বগির লাইট ও ফ্যান সচল রাখা এবং নিয়মিত চেকিংয়ের আওতায় রাখার অঙ্গীকার রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ট্রেনে নিরাপত্তাকর্মী থাকা নিশ্চিত করা এবং ট্রেন সম্পূর্ণ বহিরাগতমুক্ত রাখার কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে। শাটল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের স্থায়ী সমাধান এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে শাটল ট্র্যাকার অ্যাপ চালুর প্রতিশ্রুতিও রয়েছে প্রায় সব প্যানেলের ঘোষণায়।

ক্যাম্পাসের ভেতরে পরিবহন সহজ করতে ১ নম্বর গেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালুর দাবি তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে ইকারের সংখ্যা বাড়ানো এবং শহর থেকে ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট শিডিউলে শাটল বাস সার্ভিস চালুর অঙ্গীকারও রয়েছে। আবাসন সংকট নিরসনে ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সিন্ডিকেটে পাশ হওয়া ১০টি হল নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর। নতুন হল নির্মাণের বাজেট আসার আগেই অস্থায়ী টিনশেড ভবন নির্মাণ করে কয়েকটি হল চালুর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যমান হলগুলোকে সম্প্রসারণ করে আবাসনের ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত প্রতিটি ভবনকে আবাসন উপযোগী করে আসন বরাদ্দ দেওয়া, অপরিকল্পিত সোহরাওয়ার্দী হল ও মেয়াদোত্তীর্ণ শাহজালাল হল পুনর্নির্মাণে প্রশাসনকে বাধ্য করার অঙ্গীকারও ইশতেহারে উঠে এসেছে। সবশেষে প্রায় সব প্যানেলই শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থী সায়েম উদ্দিন আহমদ বলেন, সব সমস্যার সমাধান এক বছরে সম্ভব না হলেও যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থায় সংস্কার ও উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু করাই আমার অঙ্গীকার। প্রতিবছর অন্তত ২টি নতুন হল নির্মাণে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা এবং সিট বণ্টনে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে আমার কাজ। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের কন্ঠস্বর হয়ে তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে প্রশাসনকে বাধ্য করব।

ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মো. ইসহাক ভূঞা বলেন, আমি নির্বাচিত হলে ১০টি হল নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং নতুন হল নির্মাণের বাজেট আসার আগেই অস্থায়ী টিনশেড ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নেব। সেই সঙ্গে শাটল বাস সার্ভিস চালুর দাবিতে কাজ করব। এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সব সময় কাজ করব।

ভয়েস অব সিইউ প্যানেলের প্রার্থী আশিকুর রহমান বলেন, আমার মূল লক্ষ্য হবে হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা চালু করা। পাশাপাশি ক্যাম্পাস সংলগ্ন কটেজ ও বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে হাউজিং নীতিমালা প্রণয়ন করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক আমদানি ২৬.৬২ শতাংশ বেড়েছে
পরবর্তী নিবন্ধএক মাসে ২০ হাজার রোগী, নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার