আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রারম্ভিক ধাপকে প্রাথমিক শিক্ষা বলে। একটু ব্যাপকভাবে বললে বলতে পারি, যে শিক্ষাস্তরে শিশুরা লেখা, পড়া ও প্রাথমিক গণিত শেখার সাথে সাথে স্বাস্থ্য পরিবেশ এবং সামাজিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে তাকে প্রাথমিক শিক্ষা বলে। প্রাথমিক শিক্ষা শুধু মানুষকে স্বাক্ষরই করে না, তার ভেতরের সুপ্ত অমিত শক্তি, সামর্থ্য, কর্মদক্ষতা সম্পর্কে সচেতন করে আত্মপ্রতয়ী হিসেবে গড়ে তুলে। ১৯৪৮ সালে Universal Declaration of Human Rights সর্বপ্রথম শিক্ষাকে একটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৮০ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শিক্ষা সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষা অবশ্যই সর্বজনীন হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এই সম্মেলনের ঘোষণা পত্রের অনুসরণে বাংলাদেশে ১৯৮০ সাল থেকে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা এবং ১৯৯০ সাল থেকে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাস করা হয়। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই প্রাথমিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং যারা পৃথিবীতে উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে তারা প্রাথমিক শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে সাফল্য অর্জন করেছে। উন্নত দেশ গুলো প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগকে অধিক লাভ মনে করে। তাই তারা প্রাথমিক শিক্ষা খাতে অধিক পরিমাণে বিনিয়োগ করে। দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মতো পূর্ব এশীয় দেশগুলো দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করেছে বলে তাদেরকে Emerging Tigers বা উদীয়মান ব্যাঘ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। উদীয়মান ব্যাঘ্র নামে পরিচিতদেশ গুলোতে প্রাথমিক শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যে দেশে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ যত বেশি সে দেশে অর্থনৈতিক ভিত্তি তত মজবুত। উন্নত দেশগুলি মনে করে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অন্য যে কোন বিনিয়োগ থেকে বেশি লাভবান বা Productive । কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলো মনে করে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ একটি Unproductive খাতে বিনিয়োগ। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায় না। এই কারণে এইসব দেশে প্রাথমিক শিক্ষা এবং প্রাথমিক শিক্ষকের মান কাঙ্ক্ষিত মানের কম। প্রাথমিক শিক্ষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থা ভাল নয় এবং এসব দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল। তাই একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।