শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রত্যেক শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থেকে শিক্ষিকা হিসেবে পায় তার মাকে। সেখান থেকেই তার জীবনযুদ্ধের প্রারম্ভ। শিশু চারপাশের পরিবেশকে চিনতে শিখে মায়ের সহায়তায়। সে জীবনে প্রথম বাইরের পৃথিবীকে বিস্ময়ে অবলোকন করে মায়ের মাধ্যমে।
এই শিশুর প্রথম শিক্ষার স্তর হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। নারী শিক্ষকগণ একদিকে নিজের মায়ের মতো শিক্ষার্থীদের আদর–যত্ন করে শিক্ষাদান করেন। একজন শিশুর সব চাহিদা একমাত্র তার মা–ই বোঝে। তাই প্রাথমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ মায়েরা শিশুদেরকে আনন্দ দান করে, যা শিশুদের শিখনপদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একজন নারী শিক্ষক সবসময় চান শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও উৎসবের মধ্যদিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করুক। স্কুলের প্রতি তারা আগ্রহী ও আন্তরিক হোক। শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসের বাইরেও পড়ালেখা ও ক্লাসের প্রতি মনোযোগী হতে শিক্ষিকাগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা প্রাথমিক শিক্ষাকে সৃজনশীল ও যুগোপযোগী করে তুলেছে। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে।
নারী শিক্ষিকা বা পুরুষ শিক্ষক উভয়ের অবদান শিক্ষার্থীর মর্মমূলে থেকে সারাজীবন তাদের প্রভাবিত করে। আসলে শিক্ষা হলো সমাজের আত্মা। কারণ এটা বংশানুক্রমে চলতে থাকে। আলো–বাতাস, বাইরের প্রশস্ত মাঠে সমারোহ, খেলাধুলার সামগ্রী, বিভিন্ন উপকরণ এবং উপযুক্ত স্নেহপূর্ণ মাতৃ–পিতৃতুল্য শিক্ষক–শিক্ষিকার আদর্শসমেত বিদ্যাপীঠ চাই এবং শিক্ষকগণের সাহচর্য শিশুদের পাঠদানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষক–শিক্ষিকাগণ আন্তরিকভাবে শিশুর জীবনের ক্রমবিকাশের স্তরভেদে আত্মবিকাশের জন্য পাঠদান করে থাকেন।
আমেরিকার বিবেক এমারসন বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীকে সম্মান করার মধ্যেই রয়েছে শিক্ষার আসল রহস্য’ ফ্রোবেলের মতে, শিশুকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হলে তার শিক্ষা তিন বছর বয়স থেকে আরম্ভ হওয়া উচিত। তাঁর মতে, শিশুর আকৃতি, প্রকৃতি, শ্রদ্ধা, সামর্থ্য, রুচি–অরুচি সর্বদা আলাদা। তার শারীরিক, মানসিক, আবেগিক সব ধরনের শক্তির পুঞ্জীভূত সুষ্ঠু প্রকাশ খেলাধুলার মাধ্যমেই। স্কুলে এলেই যে জ্ঞান অর্জন করা যায় সেই ধারণাটা শিশুর আছে। অভিভাবকগণও এই বিশ্বাস থেকে সন্তানকে প্রাথমিক স্কুলে পাঠিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকেন। শিশুদের মাঝে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, সিদ্ধান্ত নিতে সন্তানকে সহযোগিতা করা, সন্তানকে শর্তহীনভাবে ভালোবাসা, সন্তানের সাফল্যে সেলিব্রেট করা, কাজের মূল্যায়ন পজিটিভলি করা, সতর্কতা ও সাবধান বাণী শোনানো, ধৈর্য্য ধরতে উৎসাহিত করা, মহৎ ব্যক্তিগণের গল্প পড়ে শোনানো– এভাবেই সন্তানের মধ্যে রসরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী মা–বাবা হওয়া সকলের কাম্য। শিশু যেন ভাবে, ‘আমাদের স্কুল আনন্দের এক রঙ্গিন ফুল’।
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাসহ সৃজনশীল কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে আলোকিত, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে দেশ ও জাতির আস্থা পূরণ করাই মা–বাবা, শিক্ষক–শিক্ষিকার নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক : চিকিৎসক, সমাজকর্মী