প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে কিন্ডারগার্টেনের তুলনা নয়

ঊর্মি বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ at ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

আমি প্রথম যখন মরিয়মনগর প্রাইমারিতে যোগদান করি সেখানে প্রথম কিন্ডারগার্টেন যেটি, সেটির অবস্থান ছিলো আমাদের বিদ্যালয়ের বিপরীতে। পুকুরের এপারওপারে। দেখতাম, কী সুন্দর পরিপাটি করে বাচ্চারা আসছে, সারাদিন মায়েরা স্কুলের সামনে বসে আছে। আবার নিয়ে যাচ্ছে। আমি এই সতেরো বছর জীবনে সচেতন কিংবা অসচেতন কোন অভিভাবক পেলাম না স্কুলে এসে খবর নিতে, আমার বাচ্চার পড়াশোনার রেসপন্স কেমন? ওনারা আসবেন শুধুমাত্র উপবৃত্তির টাকা ওনাদের মোবাইলে না ঢুকলে। এমনকি, অভিভাবক সমাবেশ বা কোন অভিযোগ জানানোর জন্য উপস্থিত হতে বললে সে বিষয়ে বেশ উদাসীন।

কে.জি. স্কুলে প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য আলাদা এবং ডাবল খাতা দেন। সব শিখন সামগ্রী পরিপূর্ণ। আর আমার প্রতিদিনকার রুটিনে থাকবে খাতা নাই, পেন্সিল নাই, কলম নাইএটা নাই, ওটা নাই। অনেকে বলবেন আমাদের দোষ! অভিভাবক যদি বাড়ি থেকে তৈরি না করে দেন, এটাও কি শিক্ষকের কাজ বাড়ি গিয়ে জিনিস পত্র গুছিয়ে আনা?

আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। জিজ্ঞেস করলে দেখা যায়, চা বিস্কুট অথবা নানরুটি। একটা বাচ্চা একটা নানরুটি খেলে কতক্ষণ থাকতে পারে, আপনারাই বলুন! আর কে.জি. স্কুলে আলাদা টিফিন, টিফিন বক্স, আলাদা টিফিন বিরতি!

একটা সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় তার পরিবার। আমাদের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ পরিবারে সমস্যা। কারোর মা নাই, বাবা নাই। থাকলেও অসচেতনতা, পরিচর্যা করার মানসিকতা নাই। ওদের অভিভাবকরা (অধিকাংশ) স্কুলে কী পড়ালো না পড়ালো এসব কখনো জিজ্ঞেস পর্যন্ত করে না। চেক করে দেখে না, পড়া রিভিশন তো দূরের কথা। জিজ্ঞেস করলে বলেকারেন্ট ছিল না, ওর বাবার সাথে হাটে গেছে, মায়ের সাথে গেছে..অনেক অজুহাত! যেটা কিন্ডারগার্টেনে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, প্রাইমারিতে বিনামূল্যে পড়ান আর কেজি তে টাকা দিয়েতাই ফ্রিতে পাওয়া জিনিসের কদর কি থাকে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজের কপাল নিজের হাতেই গড়া যায়
পরবর্তী নিবন্ধআত্মশুদ্ধির জন্য শুধু শিক্ষা নয়, যথার্থ শিক্ষার প্রয়োজন