প্রাণের স্পর্শে বাঙালির জেগে ওঠার প্রতীক্ষা

কড়া নাড়ছে বৈশাখ, চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি হালখাতার নিষ্প্রভ আয়োজন

ঋত্বিক নয়ন | সোমবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ধর্মটা হোক যার যার, বাঙালিয়ানা হোক সবার। যাক খসে যাক জীর্ণ জরা, প্রাণে লাগুক দোলা; বাংলা মায়ের শ্যামল ছায়ায় কাটুক সারাবেলা’। আর মাত্র পাঁচ দিন পরেই পহেলা বৈশাখ, নববর্ষ ১৪৩১। ঋতু বদলের হাওয়ায় গাছে গাছে নতুন ঘন সবুজ পাতা গজিয়েছে আগেই। চারদিকে বসন্তের যাই যাই রব। তবে একেবারে শীতল পরশ পাওয়ার জো নেই। সময়টা যে চৈত্রের দাবদাহের। তাই পিচঢালা পথটা আরও তেতে ওঠে, সঙ্গে বইছে লিলুয়া বাতাস।

বৈশাখও কড়া নাড়ছে দ্বারে। আগামী ১৪ এপ্রিল জাত ধর্ম বর্ণ ভুলে, রাজনীতির মতবিরোধকে শিকেয় তুলে বাঙালিত্বের জয়গান গেয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে চট্টগ্রামবাসী। রুক্ষ বৈশাখের সাথে আমজনতার অন্ধকার দূর করার প্রত্যয়দৃপ্ত ঔজ্জ্বল্য মেলবন্ধন রচনা করবে ডিসি হিল, সিআরবি, শিল্পকলা একাডেমি, পতেঙ্গা এবং চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে। এক কথায় প্রাণের স্পর্শে জেগে উঠবে পুরো চট্টগ্রাম। পহেলা বৈশাখ হচ্ছে লোকজের সঙ্গে নাগরিক জীবনের সেতুবন্ধ। ব্যস্ত নগর কিংবা গ্রামীণ জীবন যেটাই বলা হোক না কেন, নববর্ষই বাঙালি জাতিকে একত্র করে জাতীয়তাবোধে। এ অনুষ্ঠান পরিণত হয় প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে শিকড়ের মিলনমেলায়। ধর্ম, বর্ণ সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে বাঙালি জাতি এই নববর্ষকে সাদরে আমন্ত্রণ জানায়। বছরের প্রথম দিনটি বাঙালিরই শুধু নয়, বাংলা ভাষাভাষী আদিবাসী ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের জীবনজগতে স্বপ্নময় নতুন বছরের শুভ সূচনা ঘটায়। জীর্ণপুরনোকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করে বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠবে তাই পুরো জাতি।

বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব পহেলা বৈশাখ। সর্বজনীন এ উৎসব বৃহৎ বাংলা তথা বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভূমণ্ডলে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান উৎসব হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বৈশাখের প্রথম দিনটির বর্ণিল আয়োজন।

পহেলা বৈশাখকে বলা হয় বাঙালির একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় উৎসব। এছাড়া বাংলাদেশের বাঙালিদের জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, ষোলই ডিসেম্বরের মতো আরও কিছু কিছু দিবস আছে, যেগুলোর আবেদন ধর্মসম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য সমান। তবে সেসবের কোনো কোনো দিনের সঙ্গে আমাদের শোক ও বেদনার স্মৃতিও জড়িত। অর্থাৎ অবিমিশ্র আনন্দের দিন তা নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের বাইরে অন্য বাঙালিদের কাছেও সেগুলো বিশেষ আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয় না। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে পহেলা বৈশাখই যে সারা পৃথিবীর বাঙালির প্রধান ধর্মনিরপেক্ষ বা সর্বজনীন পার্বণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মঙ্গল শোভাযাত্রা : বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরনো হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় ১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখ যশোরে। দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ছিল এর উদ্দেশ্য। সেই শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশ কামনা করে শুভ শক্তির আগমনের প্রার্থনা করা হয়। এর উদ্যোগ নিয়েছিলেন চারুশিল্পী মাহবুব জামাল শামিম। শেষ পর্যন্ত যশোরে সীমাবদ্ধ থাকেনি মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকার চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। শুরুতে এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরবর্তী সময় এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিচিত হয়। ওই সময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। সে সময় সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করেছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশ্ব স্বীকৃতি : সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে। ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। স্বীকৃতি দেওয়ার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, এটা শুধু একটা সম্প্রদায় বিশেষের নয়, গোটা দেশের মানুষের, সারা পৃথিবীর মানুষের। এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। এটি এখন বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ।

এবারও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার জোর প্রস্তুতি চলছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, পহেলা বৈশাখের সকাল পর্যন্ত চলবে এই প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ণিল আর সৌন্দর্যের জন্য জীবজন্তুর প্রতিকৃতি রাখা হবে। এ শোভাযাত্রা পুরনো বছরের সব কালিমা দূর করে নতুনের আগমনী বার্তা নিয়ে আসবে।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় ইলিশের প্রতিকৃতি রাখা প্রসঙ্গে তারা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালি ইলিশ এখন চোখে দেখে না। তাই ইলিশের প্রতিকৃতি থাকেই প্রতি বছর শোভাযাত্রায়। বর্ষবরণের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত এখানকার প্রত্যেক শিক্ষার্থী। এ ঐতিহ্যের উৎসব উদযাপনের কাজ শিক্ষার্থীরা নিজেরা করলেও এই আয়োজন এখন কেবল চারুকলার কোনো অনুষ্ঠান নয়, পুরো জাতির।

হালখাতার নিষ্প্রভ আয়োজন : ১০/১৫ বছর আগেও আড়ত ও দোকানগুলোতে হালখাতার যে জাঁকজমক অনুষ্ঠান দেখা যেত, তা এখন আর নেই। আগে ব্যবসায়ীরা মুখের কথায় বিশ্বাস করে লাখ লাখ টাকা বাকি দিতেন। তার বেশিরভাগই উসুল হতো হালখাতার দিনে। এখন লেনদেনটা অনেকে ব্যাংকের মাধ্যমে চুকিয়ে নেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে আয়োজনের ধরন। সেই দিন আর নেই, নেই সেই হালখাতা উৎসবও। অথচ সর্বজনীন উৎসব হিসেবে ‘হালখাতা’ ছিল বাংলা নববর্ষের প্রাণ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারোটি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হতো। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হতো। এর পরে মোগল সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। আর এর সাথে শুরু হয় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। মোগল আমল থেকে পয়লা বৈশাখে অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পয়লা বৈশাখ জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টিমুখ করানোর পাশাপাশি আনন্দ উৎসব করতেন। এছাড়া ব্যবসায়ী ও দোকানদার পয়লা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। কিন্তু ডিজিটালের ভিড়ে বাঙালির ঐতিহ্য হালখাতা যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যর এই প্রাণের হালখাতা উৎসব আজ আধুনিক যুগের অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবীর কাছে ধোপে টিকতে পারছে না।

নগরীর হাজারী গলি, চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে এ আয়োজন এখনো কিছুটা আছে। ব্যবসায়ীরা জানান, অধিকাংশ নতুন খাতা শুরু করেন নিজ নিজ সৃষ্টিকর্তার নামে। হিন্দুরা পয়সায় সিঁদুর মেখে নতুন খাতায় ছাপ দিয়ে থাকেন। এরপর শুরু করেন নতুন বছরের লেনদেনের হিসাব। হালখাতা উৎসব শুধু হিসাবের নতুন খাতা খোলার বিষয় নয়, পাওনা আদায়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের আপ্যায়নের বিষয়টিও জড়িয়ে আছে। নগরীতে প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা ১৪৩১কে বরণ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ডিসি হিলে বর্ষবরণ : ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির, সবার যোগে জয়যুক্ত হোক’ স্লোগানে নগরীর ডিসি হিলে সকাল থেকে শুরু হবে পহেলা বৈশাখ বরণ। নাচেগানে জমজমাট থাকবে পুরো এলাকা। অনেক দিন পর প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে ছুটে আসবে সবাই। বাঙালি নারীর ঐতিহ্য শাড়ি, পুরুষরা পাঞ্জাবি পরে আসবেন অনুষ্ঠানস্থলে। শিশুরা মুখে বা হাতে রংতুলি দিয়ে আঁকিয়ে নেবে ‘শুভ নববর্ষ’। পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে পুরনো আয়োজনটি হয় ডিসি হিল এলাকায়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি একক শিল্পীদের পরিবেশনায় দিনব্যাপী জমজমাট থাকবে ডিসি হিলের আয়োজন।

সিআরবির শিরীষতলায় বর্ষবরণ : সিআরবির শিরীষতলায় সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সমবেত ও একক মূর্ছনায় রাঙানো থাকবে পুরোটা দিন।

চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা : চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে সকাল ১০টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পাবে। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন। ইলিশ মাছ, মুরগি, টুনটুনি পাখি, ঘোড়ার প্রতিকৃতি, সিংহ, পেঁচাসহ বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ এবং রঙবেরঙের সরাচিত্র স্থান পাবে শোভাযাত্রায়। এছাড়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পুরো বাদশা মিয়া সড়ক আলপনায় ভরিয়ে তোলা হবে।

শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন : বাংলা বর্ষবরণ১৪৩১ উপলক্ষে ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে বাদ্যের তালে তালে বাংলা ঐতিহ্যের উপকরণ পালকি, পুতুল, ঘোড়ার গাড়ি, প্ল্যাকার্ড ও অন্যান্য উপকরণ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর দলীয় নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করবেন।

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ : বর্ষবরণ উপলক্ষে ‘আলপনার রঙে নববর্ষ আবাহন’ শীর্ষক বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, চট্টগ্রাম। নিপ্পন পেইন্টের সৌজন্যে ৫০ জনের বেশি চিত্রশিল্পী আগামী ১৩ এপ্রিল রাতে নগরীর ডিসি হিল সংলগ্ন বৌদ্ধ মন্দির সড়কে গানে গানে তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলবেন। এরপর ১৪ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ মাঠে বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। সম্মিলন পরিষদের বাংলা বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিষদের সদস্যরা পরিবেশন করবেন স্বদেশ পর্যায়ের গান। এছাড়া দিনব্যাপী আয়োজনে অন্যান্য সংগঠন গান, নৃত্য, আবৃত্তি পরিবেশন করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের চারটি কারখানা বন্ধ, সারের সংকট
পরবর্তী নিবন্ধকেএনএফ বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে, বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছে