প্রাণের জোয়ার বইছে দেখ সিআরবির বুকে/ জোট বেঁধেছে আবালবৃদ্ধ, সাধ্য কার তা রুখে?/ গণজমায়েতে বান ডেকেছে, দাবি শুধু একটাই/ চট্টগ্রামের ফুসফুস দুর্বৃত্তায়নমুক্ত চাই। সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে তারুণ্যের পাশাপাশি সংহতি প্রকাশ করেছেন নানা বয়সের মানুষ। বাদ যায়নি শিশুরাও। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তি বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম জুড়ে বইছে জনতার বিক্ষোভ। নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের উদ্যোগে গতকাল শনিবার পঞ্চম দিনের মতো সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত সেই স্থানের সামনে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। গান-নাচ, কবিতা, মূকাভিনয় ও কথামালায় সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা। প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছিলেন আমজনতা।
তাদের অভিন্ন বক্তব্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিক এবং পরিবেশবান্ধব। তাকে ভুল বুঝিয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল, যারা তিলে তিলে সিআরবিকে ধ্বংস করে দিতে চায়। এর আগে তারা ধ্বংস করেছে বিজয় মেলা আয়োজনের স্থান আউটার স্টেডিয়াম, সংস্কৃতির তীর্থস্থান ডিসি হিল। এমনকি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। তাদের স্থির বিশ্বাস, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই চট্টগ্রামবাসীকে ফিরিয়ে দিতে পারেন তাদের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি। এ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা না করা পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম।
সিআরবি রক্ষার আন্দোলন প্রসঙ্গে বক্তাগণ বলেন, চট্টগ্রামের মাস্টার প্ল্যানে সিআরবি এলাকাকে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই বিধিনিষেধ অমান্য করে সংরক্ষিত এলাকাটিকে বাণিজ্যিক হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবুজ জায়গাকে সংরক্ষণ, নদী ও খাল উদ্ধারে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ সরকার জনগণের সরকার, জনগণের অধিকার রক্ষার সরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কতিপয় অর্থলিপ্সু ব্যক্তি সরকারকে ভুল পথে পরিচালিত করতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। একটি কুচক্রী বেনিয়া গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকার এবং জনগণের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদেরকে কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন রবি, মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, জাসদ মহানগর সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী বাবুল, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, উদীচী চট্টগ্রামের সংগঠক অধ্যাপিকা শীলা দাশগুপ্তা, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর, চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, শ্রমিক লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল আলম কক্সি, বেসরকারি সংস্থা পার্কের নির্বাহী প্রধান নজরুল ইসলাম মান্না প্রমুখ।
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক ঋত্বিক নয়ন। সমাপনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শুকলাল দাশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বোধন আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী ও সাংবাদিক মুহাম্মদ মহরম হোসাইন।
প্রতিবাদী অবস্থা কর্মসূচিতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের ও সুজিত চক্রবর্ত্তী, জাতীয় ক্রীড়াবিদ মনিরুল্লাহ কাদের, উদীচী চট্টগ্রাম ও সৃজনী সাংস্কৃতিক অঙ্গন। নৃত্য পরিবেশন করে কালারস একাডেমি। মূকাভিনয় করে ভিশন দ্য প্যান্টোমাইম। আবৃত্তি করেন দিলরুবা খানম, হিমানী মজুমদার ও অরিত্র রোদ্দুর ধর। আঞ্চলিক ছড়া পাঠ করেন উৎপল কান্তি বড়ুয়া।
সংহতি প্রকাশ করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান জাহাঙ্গীর, নগর মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসিনা আক্তার টুনু, মহানগর কৃষকলীগ নেতা হুমায়ুন কবির মাসুদ, কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস এস এম সিরাজ, সাবেক ছাত্রনেতা এম শাহাদাত নবী খোকা, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহানারা বেগম, যন্ত্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি প্রবীর দত্ত সাজু ও স্মাইল বাংলাদেশের সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম জয়।
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন কাজী, পরিবেশকর্মী শরীফ চৌহান, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মুন্না, পার্থপ্রতিম বিশ্বাস, মিনহাজুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা রাহুল দত্ত, সব্যসাচী টিটু, সৌরভ দাশ, মো. শাহজাহান, তাপস দাস প্রমুখ। সমাবেশ থেকে আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সিআরবি এলাকায় মোমবাতি প্রজ্বলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি
চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবিতে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে গতকালও বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি পালন করে। সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বৃক্ষরোপণ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, ক্যাব যুব গ্রুপ, লায়ন্স ও লিও প্রগ্রেসিভ ওয়েস্ট।
গতকাল সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধনে সংহতি জানিয়েছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রামের উপদেষ্টা ড. ইদ্রিস আলী প্রমুখ।
হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তির সংবাদে উদ্বোগ প্রকাশ করেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র। আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন ও সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী এ এস এম শহিদুল আলম কেন্দ্রের কাউন্সিল ও নির্বাহী কমিটির পক্ষে যৌথ বিবৃতিতে বলেন, প্রায় ৭০ লক্ষ লোকের বাসস্থান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক হাসপাতালের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। এজন্য রেলওয়েসহ নগরীর বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক জায়গা রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির বিশাল সম্পদে পরিপূর্ণ চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত সিআরবিতে এটি হতে পারে না।
সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আবু জাফর চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ নুরুল আলম। বক্তব্য রাখেন পরিষদ নেতা এম এ সোবহান, মো. খালেকুজ্জামান জিন্নাহ, সাংবাদিক মো. নাজিম উদ্দিন, এম কে মোমিন ও সৈয়দ খালেদ হায়াত, কবি সজল দাশ, নিলয় দে প্রমুখ।
সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া অনলাইন ভোটিং এবং লিখিত স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবেদ আলী ভুইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম আজিজ, কহিনুর খানম, সাঈদ খান আরজু, সেলিম পারভেজ ববি, সেলিম, সাগুফতা হাসান, আবু বকর, তাসলিমা আক্তার, আশিকুল, জিয়াউর, মুছা, হাসানুজ্জামান, ইমরান, প্রিন্স, আলতাফ প্রমুখ।
সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগরের উদ্যোগে গতকাল সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতি অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল। সাংবাদিক আবছার উদ্দিন অলির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহসভাপতি এস এম আজিজ, লায়ন আব্দুল মান্নান, ওসমান সরওয়ার, লায়ন আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী, আব্দুল আলিম রানা, ওসমান আবেদী, নজরুল ইসলাম, হাবিব উল্লাহ, অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, জামাল আহমেদ, আহিল সিরাজ, লিয়াকত হোসেন, জিয়াউর রহমান জেবর, এএইচএম নিজাম চৌধুরী, জিএম মানুনুর রশিদ, রফিকুল ইসলাম, শিব্বির আহমেদ ওসমান, মোহাম্মদ উল্লাহ মাহমুদ, সুভাষ সরকার, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মিজানুর রহমান শিশির, কায়সার আল মালেকী, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, মোর্শেদ হোসেন, রিয়াজ উর রহমান রিয়াজ, কাজল আক্তার, সুমন দত্ত, সবিতা রাণী বিশ্বাস, আশেক আরেফিন, সেগুপ্তা হাসান, সায়েদ খান আরজু, নুরুল হুদা চৌধুরী, আহমেদ নুর মাসুদ, মঞ্জুর আলম, মোহাম্মদ শাহ্ আলম প্রমুখ।