মুরগির মাংস ও পোলাও খাওয়ার পাশাপাশি পাকা ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে আনন্দিত ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গারা। তারা ফোন করে আত্মীয়-স্বজনদের নিজেদের ‘সুখের ঠিকানা’র বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের আত্মীয়দেরও ওখানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। একই সাথে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া অঞ্চলের ক্যাম্প থেকে পাঠানো রোহিঙ্গাদের কলরবে বসতিহীন নতুন দ্বীপ ভাসানচর একদিনের ব্যবধানে এখন প্রাণচঞ্চল এক জনপদ। ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা দালানে এসে নিজেদের ‘সৌভাগ্যবান’ মনে করছেন অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। এখন তারা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাচ্ছেন। ভাসানচরে ঠাঁই পাওয়া ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা নিজেদের নতুন আবাসস্থল গোছগাছ করতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার সেচ্ছাসেবক, নৌবাহিনী ও শরণার্থী কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় তাদের প্রথম রাত কাটে। গতকাল সকালে তাদের ঘরে ঘরে নাস্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় পোলাও, ডিম ও মুরগির মাংস। গতকাল দিনভর রোহিঙ্গারা টেলিফোনে আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন। কেউ কেউ খোশগল্পও করেছেন। কেউ কেউ ঘুমিয়েছেন। শিশুরা চরের জমিতে খেলাধুলায় মেতে ওঠে।
মনজুরুল আলম মাঝি নামে এক রোহিঙ্গা সর্দার বলেন, এখানে যারা এসেছে তারা সৌভাগ্যবান। কক্সবাজার বালুখালী ক্যাম্প-১১-তে থাকা এই মাঝি বলেন, ক্যাম্পে আমরা অনেক কষ্ট করে থাকতাম। এখানে প্রথম রাত শান্তিতে কাটিয়েছি। এই খবরটা আমাদের আত্মীয়দের পৌঁছে দিন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আপাতত কয়েক দিন এখানকার রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। অবশ্য রোহিঙ্গারা বলেছেন, রান্নার চূলা ও অনান্য তৈজসপত্র দিলে তারা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য বিশ্ব সংস্থাকে ভাসানচরে এসে কার্যক্রম শুরুরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সমরিরা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ক্যাম্পে ছিল তেরপালের ঘর। আর এখানে বিল্ডিং হওয়ায় ক্যাম্পের থেকেও বেশি ভালো লাগে। আসলে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তিনি জাতিসংঘসহ অন্যান্য বিশ্ব সংস্থাকে ভাসানচরে এসে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান।
কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ইউএনএইচসিআর ও অনান্য সংস্থা খাবার ও মানবিক সাহায্য প্রদান করে। ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছে স্থানীয় ২২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এ রকম একটি সংস্থা স্কসের চেয়ারম্যান জেসমিন প্রিমা জানান, একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য শরণার্থীদের ভাসানচরে মানবিক সহায়তার মতো প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
এদিকে ভাসানচরে করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে এখানে করোনা পরীক্ষা শুরু করার পাশাপাশি একটি আইসোলেশন সেন্টার খোলা হবে বলে।