প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হলে নগরবাসীকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকার কিংবা সিটি কর্পোরেশনের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। এগিয়ে আসতে হবে আমাকে আপনাকে আমাদের। নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত জামালখানের চেরাগী কিংবা আশপাশের এলাকা আর অন্ধকারে নয়, ছুটছে আলোর পথে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় চট্টগ্রাম মহসিন স্কুলের দেয়ালে চট্টগ্রামের ৩১ জন মনীষীর পোট্রেট পরিচিতির উদ্বোধন হচ্ছে , যা নির্মিত হয়েছে এমএস প্লাজমা কাঁচ দিয়ে। এর শিরোনাম দিয়েছেন ‘চট্টল গৌরব’। বরাবরের মতো তাঁর এ সৃষ্টিশীল কর্মযজ্ঞে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী। সাথে যুক্ত হয়েছে ফোর এইচ গ্রুপ। কাজ করলে একজন জনপ্রতিনিধিও এলাকায় মানুষের কাছে আলোকিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত পেতে পারেন তাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। একের পর এক উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন সুমন। তবে উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের জীবনকর্ম, চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য স্থান সম্পর্কে জানাতে রাস্তার আশপাশের বিভিন্ন দেয়ালকে ক্যানভাস বানিয়ে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেসরকারি সহায়তায় স্থাপন করছেন বিভিন্ন ম্যূরাল। কখন সিটি কর্পোরেশন থেকে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে, সেই আশায় বসে না থেকে এলাকার মানুষের প্রতি, চট্টগ্রামবাসীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এ ধরনের সৃষ্টিশীল কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শৈবাল দাশ সুমন। এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁর মতো আমরা সকলেই যদি যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি, তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন এই চট্টগ্রাম নান্দনিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে পরিণত হবে।
শৈবাল দাশ সুমন আজাদীকে জানান, বীর প্রসবিনী এ চট্টগ্রামে এমন কিছু মহামনীষীর জন্ম, যারা এ চট্টগ্রামকে দেশ তথা বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেছেন নিজেদের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে। কখনো তারা শিখিয়েছেন কীভাবে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে হয়, কখনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, কখনো বিপ্লবীর বেশে এ চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, কখনো আবার চট্টগ্রামকে তিন দিন শত্রুমুক্ত রাখতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন সীমিত শক্তি নিয়ে। শিশু-কিশোর ও তরুণরা এর মাধ্যমে সহজে ইতিহাস জানতে পারবে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ও পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেকের আন্তরিকতায় এ ঐতিহাসিক নিদর্শন সৃষ্টি। জামালখান গোল চত্বর সংলগ্ন এলাকা ও তার আশপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন অন্তত লাখখানেক শিক্ষার্থী যাতায়াত করে এ পথ দিয়ে। আমরা চাই- এ মনীষীদের সম্পর্কে তাদের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হোক, তারা প্রশ্ন করুক, জানুক, চিনুক। তিনি জানান, যে ৩১ জনের ম্যূরাল উন্মোচিত হতে যাচ্ছে তারা হলেন, দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসিন, মুহম্মদ এনামুল হক, আবুল কাশেম খান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোজাফফর আহমদ, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, কাজেম আলী মাস্টার, মাহবুব উল আলম, কল্পনা দত্ত, মাহাবুব উল আলম চৌধুরী, শেখ রফিউদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী, শরৎ চন্দ্র দাস, বুলবুল চৌধুরী, চাকমা রাণী কালীন্দী, লোকনাথ বল, বেনীমাধব বড়ুয়া, আব্দুল হক দোভাষ, এম এ আজিজ, নবীনচন্দ্র সেন, অমলেন্দু বিশ্বাস, এম এ হান্নান, কবিয়াল রমেশ শীল, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, রজব আলী খান, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, নবীন চন্দ্র সেন, কবি আব্দুল হাকিম, আবদুল করিম, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, অধ্যাপক আবুল ফজল ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত।
কাউন্সিলর জানান, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, প্রফেসর ড. অনুপম সেন, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেনের সমন্বয়ে একটি জুরি বোর্ড ১০০ জন মনীষী থেকে ৪০ জনকে বাছাই করেন। সেখান থেকে ৩১ জনকে নিয়ে ‘চট্টল গৌরব’ শিরোনামে ম্যূরাল উন্মোচিত হবে ১৬ ডিসেম্বর। বাকি নয়জনকে নিয়ে পরবর্তীতে রাস্তার অপর পাশের দেয়ালে একই ধরনের ম্যূরাল স্থাপন করা হবে।
প্রসঙ্গত ‘সবুজে সাজবে নগরী, নান্দনিকতায় সমৃদ্ধ হবে জামাল খান’ – এ স্ল্লোগানকে পাথেয় করে জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের প্রথম প্রয়াস ছিল ডা. আবুল হাসেম চত্বরে দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারার ব্যবস্থা। এরপর তার একের পর এক কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় দৈনিক আজাদীর পৃষ্ঠপোষকতায় জামালখানের খাস্তগীর স্কুলের সীমানা প্রাচীরে টেরাকোটায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে বায়ান্ন, ছেষট্টি, ঊনসত্তর ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত পুরো ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ‘বরেণ্য বাঙালি’ শিরোনামে বিশ জন দেশবরেণ্য ব্যক্তির প্রতিকৃতি ও উদ্ধৃতি স্থান পেয়েছে সেন্ট মেরীস স্কুলের দেয়ালে। চেরাগীর ছড়া সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। জামালখান আইল্যান্ডে স্থাপন করা হয়েছে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলোর ছবি ও বর্ণনাসমৃদ্ধ ম্যূরাল। কাজীর দেউড়ি থেকে লাভলেইন পর্যন্ত বাংলা ১২ টি মাসের বর্ণনা সমৃদ্ধ টাইলস ম্যূরাল, লাইভ ফিশ একুরিয়ামসহ নানা কর্মযজ্ঞে বাংলাদেশ আজ জামালখানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, যেটা কাউন্সিলর সুমনের স্বপ্ন ছিল।