প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়

| বুধবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, ভোলা, নড়াইল ও কুমিল্লায় গাছ পড়ে ও দেয়াল ধসে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে চার বছরের শিশুসহ এক দম্পতি প্রাণ হারিয়েছে।
শুধু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নয়, সমস্ত দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্ততি রাখা দরকার। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের উপকূলের সমস্ত জেলাগুলো যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সে সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বরিশাল। প্রতিবছর কোনো না কোনো দুর্যোগে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ব্যাপকতা প্রমাণ করে, দুর্যোগের পূর্ব সতর্কীকরণ ও ঝুঁকিহ্রাসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান কৌশল হওয়া উচিত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের নীতি-পরিকল্পনায় জনগণের জন্য দুর্যোগ-পূর্ব পূর্বাভাস ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুর্যোগের ঝুঁকি কমিয়ে নিজেদের দুর্যোগ সহনীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার মাধ্যমে উন্নত রাষ্ট্র গড়ার পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আমরা জানি, বিশ্ব এখন ‘দুর্যোগ সহনীয়তায় আগাম কার্যব্যবস্থা’- এ শিরোনামে গ্রহণ করেছে। এর ওপর এবার সম্মেলনগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে এবং গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা বাহুল্য, আগাম কার্যব্যবস্থা গ্রহণের কারণেই বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রশমনে রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়, মানুষকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুর্গতদের জন্য অর্থ, শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, পানীয়, স্যানিটেশন, নিরাপত্তাসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য আলাদা র‌্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে, আলাদা কক্ষ রাখা হয়েছে, এমনকি তাঁদের জন্য প্রতিবন্ধীবান্ধব টয়লেটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কাজগুলো করা হয় বলে মৃত্যুঝুঁকিটা অনেকটা কমিয়ে আনা গেছে।’
দুর্যোগ প্রশমনে আগাম কার্যব্যবস্থাই আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে আগাম কার্যব্যবস্থা নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, যার নাম তিনি দিয়েছেন ‘ডেলটা প্ল্যান’। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো মোকাবিলায় এই প্ল্যানে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ দেশকে দুর্যোগ সহনীয় করে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে হলে এই ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের এমন একটা কার্যকর ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে করে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কম হয়। এই ব্যবস্থা প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করতে হবে। যাঁরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণা ও বিশ্নেষণ করেন, তাঁরা সতর্কবার্তা দেবেন, তাঁদের কাজ শেষ। বাকি কাজ দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে করতে হবে। সবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা সব সময় একই থাকবে না। সব ধরনের দুর্যোগের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞরা দুর্যোগকে দুই ভাগে ভাগ করেন : একটি হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। আবহাওয়া ও জলবায়ুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। কিন্তু মানবসৃষ্ট দুর্যোগ নিয়ে আমরা বেশি কাজ করতে পারছি না। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো নিয়ে কাজ করতে পারলেও এর বাইরে যেসব দুর্যোগ আমাদের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা হলো সামাজিক দুর্যোগ। আমরা সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করে যেটুকু অগ্রগতি করি, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই সামাজিক দুর্যোগের কারণে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজবিজ্ঞানী এবং অ্যাক্টিভিস্টদের এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়টি এখন আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো স্তরের মানুষকে বাদ দেওয়া যাবে না। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আমাদের কাছে অতীতে যেসব দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এটি শেষ কথা নয়। কারণ আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের আইন রয়েছে, যার মধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আমরা মৃতদেহ ব্যবস্থাপনার কাজ করেছি। অন্যদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫ প্রণীত হয়েছে। বলা চলে, আমরা এগিয়ে রয়েছি। আগাম সতর্কবার্তার ক্ষেত্রে আবহাওয়া অধিদপ্তরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে যাদের জন্য সতর্কবার্তা, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধঅস্ট্রিয়ার জাতীয় দিবস