প্রস্তুত মহানগর পুলিশ আইনের খসড়া

সিটি কর্পোরেশন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে মতামত পাঠাতে হবে চসিককে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১১ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ দেশের তিনটি মেট্টোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ রহিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ তিনটিসহ অন্যান্য মেট্টোপলিটন এলাকার জন্য নতুন আইন করা হবে। সে লক্ষ্যে ‘মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০’ নামে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে জননিরাপত্তা বিভাগ। তবে খসড়ায় প্রস্তাবিত ‘মহানগর পুলিশের অধিক্ষেত্র এলাকা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, মহানগর পুলিশের আওতা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। আবার সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হয় ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর আলোকে।
এ অবস্থায় ‘মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০’ এর খসড়ার সঙ্গে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর কোনো ধরনের সাংঘর্ষিকতা আছে কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে ‘মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০’ এর খসড়ার উপর পর্যালোচনাসহ মতামত চেয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামসহ দেশের নয় সিটি কর্পোরেশনকে মতামত পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ’ গঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ’ এর আলোকে। অধ্যাদেশটি অনুমোদিত হয় ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর। ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও খুলনা মেট্টোপলিটন অধ্যাদশ রহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’ এদিকে ‘মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০ এর খসড়ার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটি’র সভায় প্রস্তুতকৃত খসড়ার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে আরো খতিয়ে দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ আছে, ‘চট্টগ্রাম, ঢাকা ও খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ সামরিক শাসনামলে প্রণীত হওয়ায় উক্ত আইনসমূহ রহিত করে নতুন আইন করার আবশ্যকতা রয়েছে’।
এছাড়া সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনে মেট্টোপলিটন পুলিশের অধিক্ষেত্র স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। আইনে প্রস্তাবিত মহানগর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা অভিন্ন হবে কী না বিবেচনা করা প্রয়োজন। এছাড়া ভবিষ্যতে সিটি কর্পোরেশন এলাকা সম্প্রসারিত হলে মহানগরের তফসিল হিসেবে যেসব থানাসমূহের নাম দেয়া হয়েছে সেগুলোর পুনরায় সুনির্দিষ্টকরণের আবশ্যিকতা বিবেচনা করতে বলা হয়।
এছাড়া বিদ্যমান আইনে বিশেষ করে ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি, সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট আইনের সাথে পর্যালোচনা করে সাংঘর্ষিকতা পরিহার ও সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে অনুপুক্সখ পর্যালোচনা করতে বলা হয়।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব নুমেরী জামান, চট্টগ্রাম, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, গাজীপুর ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে ‘মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০ এর খসড়ার উপর মতামত পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে পাঁচ কার্যদিবস সময় বেধে দেয়া হয়।
নির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আইনের খসড়াটি আমরা পেয়েছি। সেটা পড়ে এবং পর্যালোচনা করে কোনো মতামত দেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে পাঠাবো।
এদিকে ‘মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০’ এর খসড়ায় বলা হয়, মহানগর পুলিশ ও অধ্যাদেশ একীভূত করা প্রয়োজন। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য এ ১৬টি থানার নাম উল্লেখ আছে এ খসড়ায়। এ বিষয়ে বলা আছে সরকার কর্তৃক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত থানাসমূহের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ এলাকা গঠিত হবে। তবে সরকার প্রয়োজন বিবেচনা করলে থানাসমূহের নাম পরিবর্তনসহ চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার থানা হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে’।
উল্লেখ্য, মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০ খসড়া প্রস্তুতের আগে ১৬০ বছরের পুরনো বিদ্যমান পুলিশ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন ‘পুলিশ অধ্যাদেশ ২০০৭’ নামে একটি খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ভাটা পড়ে সে উদ্যোগে। এরপরও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ছিল ১৮৬১ সালে প্রণীত পুলিশ আইন সংশোধনের বিষয়টি। তবে কেবল আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এমন অবস্থায় প্রস্তুত করা হয় মহানগর পুলিশ আইন, ২০২০ এর খসড়া।
মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিদ্যমান পুলিশ আইন অনেক পুরনো। এখানে পুলিশ কিভাবে কাজ করবে সেটি ব্যাপকভাবে লিপিবদ্ধ নাই। সে জায়গা থেকে নতুনত্বের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আইনের সংশোধনী আসলে অনেক ভালো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু ১৯ অক্টোবর
পরবর্তী নিবন্ধএলপিজির দাম কেজিতে ২২ শতাংশ বাড়ল