কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি তৈরি করা হয়েছে দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেল স্টেশন। অনেকটা ঝিনুকের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে স্টেশনের অবকাঠামো। এখানে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, শিশু যত্নকেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুযোগ–সুবিধা। আর এটি ইতোমধ্যে বিদেশিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে গতকাল একটি বিশেষ ট্রেন কক্সবাজার এসে পৌঁছায়। ওখানে রেল মন্ত্রণালয়ের কারিগরি টিম বিভিন্ন অংশে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে।
আক্ষরিক অর্থে ঝিনুক না হলেও সমুদ্র দর্শনে এসে প্রথম দর্শনেই সামুদ্রিক আবহ পাওয়া যাবে গোটা স্টেশনে। কেবল আসা–যাওয়ার জন্যই হয়নি এই স্টেশন, দেওয়া হয়েছে এর বহুমাত্রিক রূপও। সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চারপাশে ব্যবহার হয়েছে কাচ। ছাদের উপর ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক স্টিল ক্যানোফি। ফলে দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না স্টেশনে। আর আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণে একে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন। রাজধানী থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে পৌঁছে পর্যটকরা লাগেজ বা মালামাল স্টেশনের লকারে রাখতে পারবেন। সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে। এখন এটি প্রস্তুত। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ভ্রমণ পিপাসুদের প্রত্যাশা পূরণ হবে বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল জাবের মিলন বলেন, স্টেশন ভবনটিতে এখন পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। এছাড়া যাবতীয় কাজ শেষ। এসি থেকে শুরু করে সব কাজই শেষ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ১৪টা চলন্ত সিঁড়ি রয়েছে, যা দেশের অন্য কোনো রেল স্টেশনে নেই।
কক্সবাজার সৈকত থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে আইকনিক রেল স্টেশনটি। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২শ ১৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন প্রথম স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী। তার নেতৃত্বে আছেন আরও দুজন সহকারী স্টেশন মাস্টার, তিনজন কাউন্টার ম্যানেজার।
আইকনিক রেল স্টেশনের প্রথম স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, আজকে প্রথম ট্রেন এসেছে। উদ্বোধনের পর পুরোপুরি চালু হলে এটির সুফল মিলবে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক অপারেশনের জনবল দেওয়া হয়েছে। এই স্টেশন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, যা দেখে পর্যটকরা আনন্দিত হবেন।
সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিকুল ইসলাম বলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে ভালো লাগছে। আরও কয়েকটি স্টেশনে কাজ করেছি। এ রকম স্টেশন নেই। আমরা মনে করছি এই স্টেশনে সর্বোচ্চ সুযোগ–সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।
কক্সবাজার সদর–রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রথম ট্রেন এলো কক্সবাজার। কক্সবাজারের মানুষ উচ্ছ্বসিত। চাহিদার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ রেলপথ চলে যাবে মিয়ানমার। ঢাকা থেকে সরাসরি মিয়ানমার রেলপথের সুচনা হচ্ছে।
এদিকে, নিরাপত্তার জন্য রেলওয়ে থানা বা ফাঁড়ি গঠনের জন্য আইকনিক স্টেশন পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী। তবে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রেল যোগাযোগ কক্সবাজারের সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি করবে। তার মধ্যে পর্যটন ও ব্যবসা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গতি আনতে। রেল যোগাযোগ কক্সবাজারের ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।