প্রসঙ্গ : শিক্ষকদের সম্মান জানানো

চম্পা চক্রবর্তী | মঙ্গলবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমার শিক্ষককের কিছু কথা বলতে ইচ্ছে হলো। শিক্ষকতা এমন একটা পেশা এখানে অর্থ নেই সম্মানের আশায় শিক্ষকতায় আসা। সেই সম্মানটুকুও যদি না পাই কী নিয়ে বেঁচে থাকা। সারাজীবন শুনে এসেছি ঈশ্বরের পরে শিক্ষাগুরুর স্থান। কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হলে আমরা সবকিছু ভুলে যাই। আজ আমি আমার এক শিক্ষকের কথা বলব। সবেমাত্র প্রাথমিক পাশ করে কেলিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকে ভর্তি হতেই স্কুলে সবার মুখের একটাই কথা অরুণ স্যারের মাইর সহ্য করতে পারবে তো?

৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সব ক্লাসের একজনই অংকের টিচার। স্যারের রূপ ছিলো না কিন্তু গুণে তিনি অতুলনীয়। এমন কোনো অংক নেই যে উনি মুখে মুখে উত্তর বলে দিতে পারত। উনার শত শত ছাত্র ছাত্রী আজ বাংলাদেশের তথা বিদেশেরও মাটিতে অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মরত এছাড়া ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল ব্যারিস্টার। কিন্তু এখনও অনেকের পিঠে খোঁজ করলে স্যারের বেতের দাগ পাওয়া যাবে। মাইরের জন্য বিখ্যাত ছিলো। যদিও তখন স্যারকে মাইরের জন্য মনে মনে মন খারাপ করতাম এখন মনে করি এটা ছিল আশীর্বাদ। স্যার এমন শিক্ষা আমাদের দিয়েছেন আমরা এখনও অপরাধ করতে বহুবার চিন্তা করি।

তখনকার অভিভাবকদের কথা ভাবি। কোনো অভিভাবক কখনো কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি আমার ছেলেকে এভাবে মারলেন কেন? অথচ অভিভাবকগুলো ছেলে মেয়েকে ভর্তি করাতে এসে বলত স্যার দুটো চোখ আর হাড়গুলো থাকলে হবে বাকিটা আপনি জানেন। স্যার বেত ছাড়া কোনোদিন ক্লাসে ঢুকেছে বলে মনে পড়ছে না।

আজ চারপাশে শিক্ষককের এ হেন অমর্যাদা অপমান, অসম্মান দেখে বারবার আমার শিক্ষকদের কথা মনে পড়ছে উনারা পিটিয়ে কত ছাত্র মানুষ করল। পড়া শিখে আসতেই হবে। কারো মা বাবা ছেলে মেয়েকে বলতে হয়নি পড়তে বসো। পড়া শিখো। মাইরের ভয়ে শিখে ফেলেছে। এ কেমন সময় পার করছি এখন। ছাত্ররা স্যারকে গাছের সাথে বেধে রাখছে। জোর করে চেয়ার টেনে নিয়ে নিচ্ছে। আমাদের সময় ভয়ে অফিসের পাশ দিয়েও হাঁটতে পারিনি।

আমার বারবার কেনো মনে হচ্ছে এ প্রজন্ম বাদশাহ আলমগীরের ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ গল্পটি পড়েনি বলে ‘অরুনির গুরুভক্তি’ পড়েনি বলে ওরা শিক্ষকের মর্যাদা দিতে শিখলো না। এত মাইরে সার্থকতা আসতো, আর সবাই আনন্দিত হতো যেদিন এস এস সির রেজাল্ট দিতো সেদিন আনন্দের জোয়ার বইতো পুরো স্কুলে। আমাদের সেই দিন গুলো অনেক সুন্দর ছিলো। শিক্ষককে কিভাবে সম্মান করতে হয় সেটা বই পুস্তকে লেখা থাকে না। জানি না জাতির ভবিষ্যৎ কী হবে। যে জাতি শিক্ষককে সম্মান করতে জানে না সেই জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাগ্রত থাকুক মানবতা
পরবর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক : শ্রদ্ধা নিবেদন