‘ঈদ’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ- খুশি বা আনন্দ। সে হিসেবে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)’ এর অর্থ হল- নবী (দদ.)র জন্ম উপলক্ষে খুশি। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খুশি উদযাপন করাই হল ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। ঈদে মিলাদুন্নবী(দ.) পালন করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? এটাই আজকের প্রয়াস।
‘ঈদ’ শব্দের ব্যবহার-
আরবি ভাষাভাষীরা বড় কোনো খুশি উদযাপনের দিনকে ‘ইয়াওমুল ঈদ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকেন। মুসলমানদের দু’ ঈদ ( ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) ছাড়াও অপরাপর খুশির অর্থ প্রকাশের জন্য পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে ‘ঈদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ঈসা ইবনে মরিয়ম আরজ করলেন- ‘হে আল্লাহ, হে রব, আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন যা আমাদের জন্য ঈদ হবে’। (সূরা মায়েদা, আয়াত- ১১৪)। হাদীস শরীফে জুমা, আরাফা ও আশুরার দিনকেও ঈদের দিন বলা হয়েছে ( বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাযা, নাসাঈ)। সেই অর্থে বুঝা যায় দুই ঈদ ছাড়াও ঈদ শব্দের ব্যবহার স্বয়ং কোরআন ও হাদিসেই রয়েছে। ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম) পালন কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
ইসলামী শরীয়তের বিষয়াবলীর বৈধতা প্রমাণের জন্য কোনো দলিলের প্রয়োজন না থাকলেও অবৈধ প্রমাণের জন্য দলিলের প্রয়োজন আছে। যেমন ভাত খাওয়া, এসি মসজিদে নামাজ পড়া ইত্যাদি অবৈধ হওয়ার কোনো দলিল নেই বলে এগুলো বৈধ। মোটকথা ইলমে ফিকহের (হানাফী মাযহাবের) উসুল বা নিয়ম হল- প্রত্যেক জিনিস হালাল, কিন্তু যা কোরআন হাদিসের দলিল দ্বারা অবৈধ ঘোষিত হয়েছে, সেগুলো হারাম। সেই হিসাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালন অবৈধ, তার কোনো দলিল কেউ দেখাতে পারবেন?
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘হে রাসূল, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত -১০৭)।
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ একজন রসূল প্রেরণের মাধ্যমে মুমিনদের উপর দয়া করেনে’। (সূরা- আল ইমরান, আয়াত ১৬৪) প্রতীয়মান হলো, আল্লাহর হাবিব (দ.) আমাদের জন্য রহমত এবং তাঁকে প্রেরণ করে আল্লাহপাক আমাদের উপর বড় দয়া করেনে। অপর এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন- ‘হে রসূল, আপনি বলুন- আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার রহমত (প্রাপ্ত হলে) সেটার জন্য তাদের (মুমিনদের) আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। (সূরা ইউনুস, আয়াত- ৫৮) বুঝা যায়, যেহেতু আল্লাহর হাবিব বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোচ্চ রহমত ও আল্লাহর দয়া। আর এ রহমত প্রাপ্তির জন্য সবার আনন্দ উদযাপন করা অত্যাবশ্যক। মুমিনদের জন্য তো বটেই।
আবার আল্লাহপাক অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘তোমরা যদি আমার প্রদত্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি তোমাদেরকে তা আরো বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে তার জন্য আমার শাস্তি কঠোর’। (সূরা- ইবরাহিম, আয়াত -১৭)। প্রমাণিত হলো, আল্লাহ পাকের সর্বোত্তম নিয়ামত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনে শুকরিয়া জ্ঞাপন না করা অকৃতজ্ঞতার নামান্তর। আর এই অকৃতজ্ঞতার জন্য ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে।
আজকে যারা ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বিরোধিতা করে, তারা ওই ইবলিশের অনুসারী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কট্টর কাফের হওয়া সত্ত্বেও আবু লাহাব ভাতুষ্পুত্র হিসেবে নবী পাকের আগমনে খুশি হয়ে দাসি মুক্তির কারণে যদি সোমবার দিন কবরের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তবে উম্মত হয়ে আমরা রসূলে পাকের আগমনের কারণে খুশি উদযাপন করে চির নাজাত আশা করতে পারি না? একটা বিষয় লক্ষণীয় যে ঈদে মিলাদুন্নবী (দরুদ) ও জশনে জুলুস বিরুদ্ধবাদীদের দ্বারা যতই সমালোচনা ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ততই যেন তার প্রসারতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে জশনে জুলুস হতো চট্টগ্রাম শহরে একটা। বর্তমানে প্রতিটি জেলায়, মহল্লায় জশনে জুলুস হচ্ছে। আগামীতে প্রতি ঘরে ঘরে উদযাপিত হবে ইনশাল্লাহ।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
সোবহানিয়া আলীয়া কামিল মাদ্রাসা।