প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরছে স্বজনরা

থাই ডে কেয়ারে হামলায় ক্ষোভ-দুঃখ

| শনিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

থাইল্যান্ডের ডে কেয়ার সেন্টারে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার হামলায় ২৩ শিশু নিহতের ঘটনায় মুষড়ে পড়েছে তাদের স্বজনরা। কিছুই করতে না পারার অসহায়ত্বে তাদের মনে জ্বলছে ক্ষোভের আগুন। নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরছে তারা। খবর বিডিনিউজের।
‘হামলাকারী কেন শিশুদের ওপর চড়াও হলো? তারা তার কী ক্ষতি করেছিল? কোমলমতি এই শিশুদের মারা হলো কেন?’ এমনই সব প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী এক স্থানীয় অধিবাসী, যার দুই বছর বয়সী ভাগ্নে হামলায় মারা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংককের ৫০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত উথাই সাওয়ান শহরে নার্সারি শিশুদের একটি দিবাযত্ন কেন্দ্রে স্মরণকালের অন্যতম ওই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ২৩ শিশুসহ ৩৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। যে সময়টিতে হামলা হয়েছিল সে সময়টি ছিল শিশুদের ঘুমের সময়। ২ থেকে ৫ বছর বয়সী ২৪ জন শিশুকে বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। ঘুমের সেই নিরিবিলি, শান্ত পরিবেশ নিমেষেই বদলে যায় গুলি আর ছুরি হামলায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শিশুরা ঘুমাচ্ছিল দেখে শিক্ষকরা প্রধান দরজা বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু হামলাকারী দরজা ভেঙে ঘুমন্ত শিশুদের ঘরে ঢোকেন। দায়িত্বে থাকা কর্মীরা তাকে থামাতে পারেনি। হামলাকারী বাইরে গাড়ি পার্কিংস্থলে কয়েকজন কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে চার কর্মী নিহত হন। এরপরই তিনি দরজা ভেঙে শিশুদের ঘরে ঢুকে এলোপাতাড়ি হামলা চালান।
একের পর একজনকে ছুরি মেরে, গুলি চালিয়ে সুন্দর, স্নিগ্ধ স্থানটিকে মৃতদেহ, মৃত্যু পথযাত্রী আর আহতদের দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাড়ি ফেরেন। এরপর নিজের স্ত্রী-সন্তানকে গুলি করে অস্ত্র ঘোরান নিজের দিকে, করেন আত্মহত্যা।
পুলিশ পরে জানায়, দিবাযত্ন কেন্দ্রে নিহত বেশিরভাগ শিশুরই মৃত্যু হয়েছে ছুরিকাঘাতে, প্রাপ্তবয়স্করা মরেছে গুলিতে। এক খুনির হামলায় এত শিশুর মৃত্যু সামপ্রতিক ইতিহাসে আর দেখা যায়নি।
হামলায় প্রাণ যাওয়া তিন বছর বয়সী পাত্তারাউতের দাদি তার প্রিয় খেলনা নিয়ে ঘটনাস্থলে যান শেষবারের মতো নাতিকে দেখতে। নাতির কফিনে খেলনাটি রাখেন তিনি। স্বাভাবিক সময়ে দিবাযত্ন কেন্দ্রটিতে ৯০ জনের বেশি শিশু থাকলেও হামলার দিন খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেখানে অনেক কম শিশু উপস্থিত ছিল। এই শিশুদের মধ্যে কেবল একজনই বেঁচে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হামলাকারীর হামলা চালানোর কারণ কি ছিল তা এখনও জানা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, মাদক ব্যবহারের কারণে হামলাকারী ব্যক্তিকে গত জুনে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। প্রাণ হারানো তিন বছর বয়সী পাত্তারাউতের দাদী দুয়াংফাং বলেন, প্রথম যখন গুলির ঘটনার কথা শুনলাম, আমি সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারিয়েছিলাম।
দুয়াংফাংয়ের মতো নিহত অন্যান্য শিশুদের স্বজনরাও শুক্রবার সকালে দিবাযত্ন কেন্দ্রের বাইরে ভিড় জমায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেও কেন্দ্রটিতে বহু স্বজন অপেক্ষায় ছিল। আবার অনেকে পুলিশ স্টেশনেও ভিড় করেছে।
অপেক্ষমাণ এই স্বজনদের সামনে একের পর এক সাদা-গোলাপি কফিনে করে হাজির করা হয়েছে শিশুদের মৃতদেহ। হামলায় ৪৬ বছর বয়সী আরেকজন নারী নিপা লওংসেচাইসন তার নাতি এবং নাতনি দুইই হারিয়েছেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত, রাগাম্বিত। কারণ, আমার কিছুই করার নেই। কেবল নিপাই নন, তার মতো অন্যান্যরাও একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, তারা দুঃখ ভারাক্রান্ত আর মনে যেসব প্রশ্ন ভিড় করেছে তারও উত্তর জানা নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুশ্চিন্তার বড় কারণ ছিনতাই
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাইয়ে খামার থেকে ৭টি কালিম পাখি উদ্ধার