বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) কেন্দ্রীয় এডহক কমিটির প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল নগরীর নেভাল এভিনিউ সংলগ্ন অফিসার্স ক্লাবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক এস. এম আরিফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও জেলা কমিটির সহসভাপতি নুরুল মুহাম্মদ কাদেরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতির কমিটির সদস্য সচিব, বাকাসস জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন।
বাকাসস আয়োজিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭ জেলার প্রায় ২৯০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাকাসস কেন্দ্রীয় এডহক কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলাম। অতিথি ছিলেন আতাউর রহমান (ঢাকা), মোহাম্মদ হানিফ (কুমিল্লা), এস এম আতিয়ার রহমান (যশোর), আব্দুল বারেক মোল্লা (বরিশাল), আব্দুল মান্নান (ভোলা), এস এম জাকারিয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাহফুজ আলম (বরিশাল), বাবুল হোসেন (ফরিদপুর), নাহিদুল ইসলাম (সিলেট), স্বপন কুমার দাশ (চট্টগ্রাম), মো. মহসিন (শরীয়তপুর), মাহফুজুল আলম (প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বরিশাল) এবং সুমন (বান্দরবান)।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, সূর্যের আলো নিয়ে চাঁদ যেমন আলো দেয়, ঠিক তেমনি জেলা প্রশাসনের সহকারীরা সূর্যের মত কাজ করে বলেই আমরা জনগণের সেবায় চাঁদের মত কাজ করতে পারি। অথচ তাদের কাজের পরিধি অনুযায়ী পদোন্নতি হয় না। প্রশাসনের আটটি পদে একই ধরনের কাজ হলেও ভিন্ন নাম দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি এই যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সার্বিক সহযেগিতা করবো।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে জেলা নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, মাঠ প্রশাসনের সহকারীরা প্রশাসনের চালিকাশক্তি, অথচ তারা বছরের পর বছর অবহেলিত। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাঠ প্রশাসনের সহকারীরা দীর্ঘ বছর ধরে একই ধরনের কাজ করেও পদবিন্যাসে বৈষম্য। বেতন কাঠামো ও পদোন্নতিতে অবিচার। ২৫–৩০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতির সুযোগ দেয়া হয়নি। ২০১৯ সাল থেকে বাকাসস বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ২০২১ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আটটি পদ একীভূত করে ‘সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০২২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায় এবং তিন ভাগে বিভাজন করা হয়, যা নতুন করে বিভেদ সৃষ্টি করে। এ বৈষম্য নিরসনের দাবি বাকাসস কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়।
সম্মেলনে বাকাসস নেতৃবৃন্দরা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল–২০২১ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আটটি পদ একীভূত করে ‘সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ পদে রূপান্তর করতে হবে, ২০১০ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে অফিস সহকারী–কাম–কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদকে পুনরায় ‘কম্পিউটার অপারেটর’ পদে রূপান্তর করতে হবে এবং পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে সমতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক বিশ্লেষণ উল্লেখ করে তারা বলেন, গবেষণা অনুযায়ী–একজন জেলা প্রশাসক বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নথি নিষ্পত্তি করেন, যার মূল প্রস্তুতকারী মাঠ প্রশাসনের সহকারীরা। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গড়ে ৮–৯ বার পদোন্নতি পান, সহকারীরা পান সর্বোচ্চ একবার।
বাকাসস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস.এম. আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের আন্দোলন ছিল ন্যায়ের জন্য। ২০২১ সালের প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা বাড়ছে। আমরা চাই প্রশাসনের দক্ষ জনশক্তির মর্যাদা নিশ্চিত হোক। সম্মেলনে চট্টগ্রাম জেলার এসএম আরিফ হোসেনকে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা জেলার মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলামকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। সভায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।












