প্রশাসনের অজান্তেই খাবারের দাম বাড়ালেন ডাইনিং ম্যানেজাররা

চবির আবাসিক হল ।। ব্যক্তিগত হোটেল-দোকানে নেই মূল্য তালিকা

চবি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৯ মে, ২০২৩ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মূল্য হল কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করার কথা থাকলেও হল প্রশাসনের অজান্তেই খাবারের দাম বাড়িয়েছে ডাইনিং ম্যানেজাররা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ দেখিয়ে বার বার খাবারের দাম বাড়াচ্ছে হলগুলোর ডাইনিং এবং ক্যাম্পাসে অবস্থিত ব্যক্তি মালিকানাধীন খাবারের দোকানগুলো।

ব্যক্তিগত হোটেলদোকান মালিকরা নিজেদের ইচ্ছে মতো খাবারের মূল্য নির্ধারণ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য তালিকা রাখার কথা থাকলেও সেটা মানছেন না তারা। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে গতকাল সোমবার খাবারের মূল্য তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং দোকানগুলোতে সেটি টানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার। কিন্তু সেটিতে কোন খাবারের মূল্য কত নির্ধারণ করা হয়েছে তা জানা যায়নি। গতকাল আবাসিক হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলের ডাইনিংগুলোতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে নতুন মূল্য তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে হল প্রভোস্টের কোনো স্বাক্ষর নেই, নেই হলের নামও। সোহরাওয়ার্দী হল, শাহজালাল হল, আলাওল হল, শাহ আমানত হল, আলাওল হল, শহীদ আব্দুর রব হলে কোনো প্রকার কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই খাবারে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হচ্ছে।

ডাইনিংয়ে লাগানো খাবারের নতুন মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, মুরগিসবজি; ডিমসবজি এবং মাছসবজি প্রতি টোকেন ৩০ টাকা। অথচ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত প্রতিটি টোকেনের মূল্য ছিল ২৫ টাকা। অতিরিক্ত মুরগি অথবা মাছের দাম রাখা হচ্ছে ১৫ টাকা। যা আগে ছিল ১০ টাকা।

এর আগে, গত ২ এপ্রিল প্রভোস্ট কমিটির বৈঠকে হলের ডাইনিংয়ের খাবারের টোকেন প্রতি পাঁচ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খাবারের দাম আগের দামে রাখে প্রশাসন। কিন্তু ঈদের ছুটির পর হুট করে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করে ডাইনিং ম্যানেজাররা। যা জানেন না হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ডাইনিংয়ে ও দোকানগুলোতে দফায় দফায় খাবারের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

নিয়মানুযায়ী হলের ডায়নিংয়ের খাবারের দাম বৃদ্ধি করতে হলে তা প্রভোস্ট কমিটির মিটিং থেকে অনুমোদন হয়ে আসতে হয়। এ ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দী হলের ডায়নিং পরিচালক মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণে ২৫ টাকা টোকেনের মূল্য রেখে আমরা ডায়নিং চালাতে পারছি না। হল প্রভোস্টকে আমরা জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ২৫ টাকায় বিক্রি করলে আমাদের অনেক বেশি ক্ষতি হচ্ছে তাই দাম বাড়িয়েছি।

শহীদ আবদুর রব হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. দানেশ মিয়া আজাদীকে বলেন, দাম বাড়ানোর বিষয়টা সম্পর্কে আমরা অবগত না। প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ম্যানেজার বলেছিলো বাড়ানোর জন্য। কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি এ ব্যাপারে। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা বসবো। একটা সিদ্ধান্তে আসবো।

অপরদিকে খাবারের দোকানে একটি ডিম ভাজি বা রান্না করা ২০২৫ টাকা রাখা হচ্ছে, যা আগে ছিলো ১৫ টাকা। মুরগির মাংস প্রতি প্লেট রাখা হচ্ছে ৬০৮০ টাকা, যা আগে ছিলো ৪০৬০ টাকা। রুইসহ বিভিন্ন মাছ প্রতি প্লেট রাখা হচ্ছে ৭০৯০ টাকা, যা আগে ছিলো ৫০৬০ টাকা।

শাহ আমানত হলের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমরা টিউশন করে আমাদের খরচ চালাই। টিউশনে তো আমাদের বেতন বাড়ে না। কিন্তু ঈদের পর হলে এসে দেখি খাবারের অতিরিক্ত ৫ টাকা করে দাম আদায় করা হচ্ছে। আমরা যারা টিউশন করে খরচ চালাই তাদের জন্য এই ৫ টাকা অনেক কিছু। কিন্তু বাইরের হোটেলগুলোতে খাবারের দাম অনেক বেশি। যা কারণে বাধ্য হয়ে ৫ টাকা বেশি দিয়েই আমাদের হলের খাবার খেতে হচ্ছে।

কয়েকজন দোকানদার জানান, দোকানের ভাড়া বেড়েছে, মাছমাংস কেজি প্রতি বেড়েছে ১০০১৫০ টাকা। দোকানের স্টাফদের বেতন দিতে হয়। সব মিলিয়ে আমাদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই দাম বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার আজাদীকে বলেন, আজকে (গতকাল) আমরা মূল্য তালিকা ঠিক করে দিয়েছি। প্রতিটি খাবারের দোকানে এটি টাঙিয়ে দেয়া হবে। এটি দেখেই শিক্ষার্থীরা মূল্য পরিশোধ করবে। এরচেয়ে বেশি মূল্য রাখলে সেই দোকান সিলগালা করে দেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়ির শাহনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা
পরবর্তী নিবন্ধচলে গেলেন সমরেশ মজুমদার