প্রযুক্তি প্রতিদিন গ্রাস করছে আমাদের নতুন প্রজন্মের মেধা ও মনন। আজকাল তরুণ প্রজন্ম ফেসবুক নিয়ে একধরণের ঘোরের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ফেসবুকে যে, নেশা হচ্ছে এটা আর এখন অস্বীকার করার উপায় নেই। এই রোগে প্রিয় শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়া–লেখা ও বইও খুলতে পারছে না। সামনে পরীক্ষা, তার এখন পড়ালেখা দরকার কিন্তু শত চেষ্টা করেও পড়ায় মনোযোগী হওয়া যাচ্ছে না। নিজেকে বলছে ‘এখন আমার এসব বন্ধ করা উচিত, পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া উচিত। আমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে চাই, কিন্তু ফোনটা বন্ধ করে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছে না, ঘুমের বেলায়ও একই পরিস্থিতি। মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে রাতের ঘুম। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
তরুণরা স্বভাবতই আড্ডাবাজ। আগেকার দিনের মতো এখন আর খেলার মাঠ, স্কুল–কলেজ ও মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে, আত্মীয়–স্বজন বা বন্ধুদের বাড়িতে যেতে হচ্ছে না আড্ডা দেয়ার জন্য। এখন তো বোতামের টিপেই খুলে যাচ্ছে উন্মুক্ত পৃথিবীর সব কিছু। ফেসবুকে সহজেই এবং অল্পসময়েই জুটে যাচ্ছে হাজারো বন্ধু। আগেকার দিনে অভিভাবকগণ জানতেন তার সন্তান কার সাথে মিশছে বা খেলছে। এখন কিন্তু তা দেখার বা জানার কোনো সুযোগ নেই। ভার্চুয়াল জগতের এই বন্ধুরা যে সব ভালো তা কিন্তু নয়। তবে তা বুঝার ক্ষমতা বা পরিপক্কতা আসার আগেই তরুণরা ধাবিত হচ্ছে বিভিন্ন অনৈতিকতার সাথে। যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। এ ধরনের অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে একজন শিক্ষার্থী অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে কী পরিমাণ টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয় গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। প্রযুক্তির ব্যবহার কিংবা অন্যান্য সকল কাজে রুচিবোধ আর পরিমিতিবোধের পরিচয় দিতে হবে। সন্তানের সামনে বা পাশের রুমে আপনি বিদেশি সিরিয়াল দেখবেন আর সন্তানকে জোর করে পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে মনে করেন আপনার সন্তান জান দিয়ে পড়াশোনা করছে? না, তা আপনার ভুল ধারণা। পরিবার থেকেই যদি সঠিক অনুশাসন না পায় তা হলে সন্তান বেঁকে যাওয়া কিংবা বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি। বর্তমানে সারাদেশের শহরগুলোতে খেলাধুলার পরিসর বা মাঠ ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ায় শিশু–কিশোরদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রযুক্তির অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।
পত্র–পত্রিকা বা যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে অবগত হলাম যে, উন্নত দেশে সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহারের গতিবিধি লক্ষ রাখার জন্য বেশ কিছু অ্যাপস রয়েছে যার সাথে আমরা পরিচিত নই, কারণ আমরা এখনও তা উন্নয়ন করতে পারিনি। আসুন, আমরা নতুন প্রজন্মকে একটা উপযুক্ত পরিবেশ দিই যাতে করে তারা সুন্দর মন ও মনন নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। নিজেদের সন্তানদের প্রতি একটু নজর দিই, তাদেরকে যদি নৈতিক শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করি এরা একদিন ইনশাআল্লাহ সোনার মানুষে পরিণত হবে।