প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের হাতে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিগত সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আরো সমৃদ্ধ হতে পারে দেশের শিক্ষা কাঠামো। দেশের শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, পলিসি মেকার ও উন্নয়নকর্মীদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক অনলাইনে আয়োজিত এক ব্রেইনস্টর্মিং অধিবেশনে এমন মন্তব্য করেন আলোচকরা।
করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট শিক্ষাব্যবস্থার সংকট থেকে উত্তরণ, শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ, ব্যবহার ও ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাখাতের অগ্রগতির লক্ষ্যে এটুআই এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি এ আলোচনার আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য যে, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ার শুরু থেকেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও সরকারের উদ্যোগে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনলাইনে অব্যাহত রয়েছে শিক্ষাকার্যক্রম।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষকদের যথাযথ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, চলমান অনলাইন ক্লাসগুলো বিশেষায়িত অ্যাপসের মাধ্যমে আরো বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব করে তৈরি করা এবং অনলাইন মাধ্যমে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা গেলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র আমূল বদলে যাবে।
এদিকে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অনুকরণের পরিবর্তে উদ্ভাবনের দিকে নজর দিতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। এর ফলে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও অগ্রগতির অপার সম্ভাবনার পাশাপাশি বহুমুখী চ্যালেঞ্জেরও সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এমনকি অনেক প্রযুক্তি অচল হয়ে যাচ্ছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল জনগণের কাছে ফলপ্রসূভাবে পৌঁছে দিতে হলে আমাদের নতুন ও পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। চতুর্থ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি কথাগুলো বলেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ইশতেহারকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালন করে আসছে আইসিটি ডিভিশন। এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘যদিও মানছি দূরত্ব, তবুও আছি সংযুক্ত’।
অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, বুদ্ধিমত্তা ও নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার দিক থেকে আমাদের যুবসমাজ যথেষ্ট দক্ষ ও উদ্যোগী। তাই তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে এরাই দেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকার দেশগুলোয় নয় বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি শিশু একটি সহজ শব্দ পড়তে পারে না। এক-তৃতীয়াংশ শিশু একটি সহজ বাক্য পড়তে পারে না। এর কারণ কী? এর কারণ হচ্ছে যথাযথ শিক্ষার অভাব। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৭ শতাংশের কাছাকাছি শিক্ষকের কার্যকরভাবে পড়া ও লেখার নির্দেশনা দেওয়ার সামান্য জ্ঞান আছে। তাই যথাযথ শিক্ষার জন্য দরকার দক্ষ শিক্ষক। অনেক আগে ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোয় অদক্ষ শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতে পারে প্রযুক্তি। এর বাইরে ক্লাসে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ঠেকাতেও প্রযুক্তি সাহায্য করতে পারে। শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির সমন্বয় করতে পারলে লাভের পাল্লাই বেশি ভারী হবে।
অন্যান্য খাতের মতোই ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থায়ও নানা রকম পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গেই যদি ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থাকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে স্কুলগুলোয় তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এসব জায়গায় অনেক শিক্ষকের বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকে না বা অনেকই ঠিকমতো ক্লাসে হাজির হন না।
আমাদের প্রযুক্তিগত শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। তখন তাঁরাই প্রদর্শন করতে পারবেন তাঁদের যোগ্যতা। দেখাতে পারবেন কারিশমা। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট আকারের ক্লাসরুম, পুষ্টি সরবরাহ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য সুবিধার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষাপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ওপর সম্পদের যথাযথ বিনিয়োগ করলে সুফল বেশি।