প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, অহেতুক কোনো বিলম্ব না করে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। গতকাল শুক্রবার সকালে নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত দিনব্যাপী রুকন শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম, সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ ও মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহানগরী আমীর শাহজাহান চৌধুরী। এতে দারসুল কোরআন পেশ করেন বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার সাবেক প্রফেসর ড. মাওলানা সাইয়্যেদ আবু নোমান।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পলাতক স্বৈরাচার। দেশ থেকে পাচার করা টাকা তারা এখন দেশের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াতে খরচ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সারা পৃথিবীর কাছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজাবাসী নারী ও শিশুকে হত্যা করে আইয়ামে জাহেলিয়াতের বর্বর যুগের ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। ইসরায়েল গণহত্যা পরিচালনার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলমানদের গুঁড়িয়ে দিতে হবে। ইসরায়েলকে ইন্ধনদাতা–সমর্থন দেওয়া রাষ্ট্রগুলোকে উদ্দেশ্য করে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, হামলা বন্ধ করুন। যদি তা করা না হয়, তাহলে গোটা মুসলিম উম্মাহ দুর্বার বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে। তিনি জাতিসংঘ ও ওআইসিকে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলকে বয়কট এবং জেনোসাইডের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম বলেন, পৃথিবীতে এমন কোন নবী–রাসূল আসেননি যাদের উপর জুলুম–নির্যাতন চালানো হয়নি। সকল যুগেই হকের সাথে বাতিলের সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু বাতিলের কোনো ষড়যন্ত্রই ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। রাসূল (সা.) এর যুগে ইসলামী আন্দোলনের পুরো ইমারতের ভিত্তি রচিত হয়েছিল সাহাবীদের শাহাদাতের খুন–জুলুম, নির্যাতনের উপর ভিত্তি করে।
এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক কাজকে জামায়াতের প্রত্যেক জনশক্তির অভ্যাসে পরিণত করতে হতে। সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে সমাজকর্মকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, মোয়ামেলাত ইসলামী শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের নিয়ম–কানুন নির্দেশ করে। এটি সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে ব্যবসা–বাণিজ্য এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন পরিচালনার ওপর গুরুত্ব দেয়, যাতে করে সমাজে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়। মোয়মেলাতের মাধ্যমে ইসলামী অর্থনীতি একটি নৈতিক ভিত্তি পায়, যা সকলের কল্যাণ সাধন করে।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, জামায়াত এই দেশে অস্পষ্ট কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় না, সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। আমরা শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেকে রক্ষা করবো। কারো কান কথায় গুরুত্ব দেবো না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে উপস্থিত ছিলেন মহানগর নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সাবেক প্রো–ভিসি ড. আবু বকর রফিক আহমদ, নগর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস ও মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা মমতাজুর রহমান, চবি
জামে মসজিদের সাবেক খতিব এ বি এম ছিদ্দিকুল্লাহ, ডা. ছিদ্দিকুর রহমান, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, হামেদ হাসান ইলাহী, আবু বকর ছিদ্দিক, প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান, আমির হোছাইন।