বান্দরবানের রুমায় পাহাড়ের নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার এক সদস্যের মৃতদেহের খোঁজে শ্বাসরুদ্ধকর প্রায় ছ’ঘন্টা অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। জঙ্গি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধে হত্যা করা জঙ্গীর কবরের সন্ধান পাওয়া গেলেও কবর খুঁড়ে মেলেনি হত্যাকরা জঙ্গির মৃতদেহ। যৌথ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহটি নিয়ে গেছে কোনো গোষ্ঠী। তবে মৃতদেহ পাওয়া না গেলেও কবর খুঁড়ে মাটির নীচে পাওয়া কাপড়–জিনিসপত্র দেখে ছেলের পরিচয় শনাক্ত করেছে নিহতের বাবা। মৃত ব্যক্তির নাম আলামিন। তারবাড়ি কুমিল্লা হালিমা নগরে। পিতার নাম মোঃ নূরুল ইসলাম। রোববার শ্বাসরুদ্ধকর এ অভিযান পরিচালিত হয় রুমা উপজেলার গহীন পাহাড়ে। অভিযানে আল–আমিনের বাবা নুরুল ইসলামও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, নব্য জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘরছাড়া ৫৫ জন যুবক পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি সীমান্তবর্তী পাহাড়ের গহীন অরণ্যে বিভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথকভাবে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সস্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাসনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) অর্থের বিনিময়ে ভারী অস্ত্র চালানো, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি‘সহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে জঙ্গিদের। প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া কয়েকজন জঙ্গী সদস্যের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে বাকবিতন্ডায় এক জঙ্গী সদস্যকে হত্যা করে কবর দেয়া হয়েছে বলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দেন গ্রেফতার দুই জঙ্গি।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে গত শুক্রবার গ্রেফতার দুই জঙ্গিকে নিয়ে যৌথ বাহিনী এবং পুলিশের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড়ের অরণ্যে একটি কবরের সন্ধান পান। রোববার যৌথ বাহিনী এবং পুলিশের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নোমান সিবলী হেলিকপ্টারযোগে ঘটনাস্থলে গিয়ে কবর খুঁড়ে দেখেন জঙ্গীর মরদেহ উধাও। তবে কবর খুঁড়ে জঙ্গীর মৃতদেহ মোড়ানো কম্বল‘সহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে।
এদিকে বিডিনিউজ জানায়, হত্যার প্রমাণ যাতে না থাকে সেজন্যই কবর থেকে ছেলের লাশ গায়েব করা হয়েছে বলে সন্দেহ আল–আমিনের বাবার। তিনি গতকাল সোমবার রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমার সন্দেহ জঙ্গিরা হয়তো ছেলেকে হত্যা করেছে। কোনো প্রমাণ যেন সামনে না আসে, সেজন্য লাশ গায়েব করে ফেলেছে তারা। আমার ছেলে হয়তো ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসতে চেয়েছিল। এজন্য জঙ্গিরা তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে।’ এ ঘটনায় মামলা করার কথা ভাবছেন বলে জানান আমিনুর রহমান ওরফে আল–আমিনের বাবা।
নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও স্বজন গতকাল সোমবার বান্দরবানেই অবস্থান করেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কুমিল্লা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া এক কিশোর (বয়স ১৭) ধরা পড়েছে। সে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, আমার ছেলে আল–আমিন বান্দরবানের রুমা উপজেলার গহীন অরণ্যে না খেয়ে, রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৫ নভেম্বর মারা গেছে। সেদিন দুপুরে তারা আল–আমিনকে দাফন করেছে। র্যাবের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে শুক্রবার আমরা বান্দরবানে যাই ছেলের লাশের সন্ধানে। রোববার আমাকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে র্যাব ঘটনাস্থলে যায়। তারপর হেঁটে গহীন অরণ্যে যেখানে আল আমিনের কবর সেখানে যাই আমরা। কিন্তু কবর খোঁড়ার পর দেখা যায়, লাশ গায়েব হয়ে গেছে। কবরের আশপাশে কিছু স্যান্ডেল, জামা–কাপড় ও হাঁড়ি–পাতিল পড়ে ছিল। এ ঘটনার পর র্যাব ধারণা করছে, কবর থেকে কেউ লাশ সরিয়ে ফেলেছে।’
আল–আমিনের বাবা আরও বলেন, ‘যারা ফুঁসলিয়ে আমার ছেলেকে এই পথে নিয়ে খুন করেছে তাদের গ্রেপ্তার আর বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।’