প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্র জীবনীকার হিসেবে খ্যাতিমান। প্রভাত কুমারের জীবনের বৃহত্তম এবং মহত্তম কীর্তি তথা সর্বশ্রেষ্ঠ অনন্য সৃষ্টি হল চার খণ্ডে রচিত ‘রবীন্দ্রজীবনী’। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৯২ সালের ২৫ জুলাই নদীয়ার রানাঘাটে। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছেন রানাঘাট পালচৌধুরী স্কুলে। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে স্কুল ছাড়তে হয়। ১৯০৮ সালে প্রভাতকুমার জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান লাভ করেন।
পরের বছর চলে যান শান্তিনিকেতনে। সেখানে ব্রহ্মচর্যাশ্রমে যোগ দেন তিনি। শান্তিনিকেতনে কেটেছে তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময়। প্রভাত কুমার সারাজীবন জ্ঞানের সাধনায় কাটিয়েছেন। জাতীয় জাগরণের দিনের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেছেন ‘প্রাচীন ইতিহাসের গল্প’। এটি মাত্র ২০ বৎসর বয়সে ১৯১২ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা ও পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। ১৯১৮ সালে প্রভাতকুমার শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে শিক্ষকতা এবং গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বভার নেন। বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি। বিশ্বভারতীর গ্রন্থাগার গঠনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯২১ সালে খ্যাতিসম্পন্ন ফরাসি পণ্ডিত সিলভা লেভি ভারতে এলে তার কাছে চীনা ও তিব্বতি ভাষা শিখে গবেষণা শুরু করেন।
তার গবেষণার বিষয় ছিল- বৌদ্ধ ও হিন্দুদর্শনের সমগ্র চীনা ভাষা। তাঁর রচিত ‘রবীন্দ্রজীবনী’ গ্রন্থে সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্তভাবে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন, সাহিত্যকীর্তি, সমাজ-চিন্তা, রাষ্ট্র-দর্শন, শিক্ষা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ের পরিচয় মেলে। কবিগুরুকে নিয়ে তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ : ‘রবিকথা’, ‘রবীন্দ্র জীবনকথা’, ‘রবীন্দ্রগ্রন্থপঞ্জী’, ‘রবীন্দ্রনাথের গান-কালানুক্রমিক সূচি’ ইত্যাদি। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রচিত অন্যান্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘প্রাচীন ইতিহাসের গল্প’, ‘ভারত পরিচয়’, ‘বঙ্গ পরিচয়’, ‘পৃথিবীর ইতিহাস’, ‘রামমোহন ও তৎকালীন সমাজ ও সাহিত্য’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রাশিয়ার ভ্রমণ নিয়ে রচিত ‘সোভিয়েত সফর’ এবং আত্মজীবনী ‘ফিরে ফিরে চাই’ লেখকের আত্ম-অনুসন্ধানমূলক দুটি রচনা। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী, ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৫ সালের ৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।