প্রবোধচন্দ্র সেন (১৮৯৭–১৯৮৬)। ছন্দবিশারদ, ঐতিহাসিক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ও ছান্দসিক। ইতিহাস ও রবীন্দ্রচর্চায় তাঁর অবদানও বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।‘ছন্দ’ ছিলো তাঁর গবেষণার বিষয়। ছন্দ বিষয়ে রয়েছে তাঁর একাধিক গবেষণা গ্রন্থ। তিনি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুলাই কুমিল্লার মনিয়ন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদিনিবাস ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সরাইলের চুন্টা গ্রামে। পিতা হরদাস সেন, মাতা স্বর্ণময়ী সেন। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ এপ্রিল কুমিল্লার মনিয়ন্দ গ্রামে। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে প্রবোধচন্দ্র সেন কর্মজীবন শুরু করেন খুলনার হিন্দু একাডেমী (বর্তমানে দৌলতপুর কলেজে) ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। দীর্ঘ দশ বৎসর অধ্যাপনার শেষে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বানে বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনে রবীন্দ্র–অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হলে তিনি বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিক উৎসবকালে রবীন্দ্রভবনের প্রথম রবীন্দ্র–অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে অবসরগ্রহণ করার পর বিশ্বভারতীর সম্মানসূচক এমেরিটাস অধ্যাপক হন। ছাত্রাবস্থায় প্রবোধচন্দ্র সেনের ছন্দবিষয়ক এ প্রবন্ধ পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ‘ছান্দসিক’ বলে অভিহিত করেন। রবীন্দ্রনাথের ‘ছন্দ’ গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়েও তাঁর গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে তাঁর রচিত ধর্মজয়ী অশোক, রামায়ণ ও ভারত সংস্কৃতি, ভারত–পথিক রবীন্দ্রনাথ, ভারতাত্মা কবি কালিদাস, ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত ইত্যাদি গ্রন্থে। ছন্দ নিয়ে রচিত তাঁর গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ছন্দ–পরিক্রমা, ছন্দ–জিজ্ঞাসা, বাংলা ছন্দে রবীন্দ্রনাথের দান, বাংলা ছন্দ–চিন্তার ক্রমবিকাশ, নতুন ছন্দ–পরিক্রমা প্রভৃতি। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর প্রবোধচন্দ্র সেন মৃত্যুবরণ করেন।