সাগরের বুকে দৃষ্টিনন্দন ঢেউ, সৈকতে সবুজ গালিচা আর সারি সারি ম্যানগ্রোভের অপরূপ দৃশ্যে মনমাতানো সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের একমাত্র প্রবেশদ্বারে কাঠের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার পর্যটকরা। পর্যটকরা লাফিয়ে লাফিয়ে কাদামাটি অতিক্রম করে সৈকতে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ফলে ৩ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৩০মিনিটেরও বেশি। এমন দুর্ভোগ নিরসনে কোন পক্ষ এগিয়ে আসছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, কাঠের পুরাতন সাঁকোটির অর্ধেকাংশ ভেঙে গিয়ে পারাপার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। উল্টো পথে ঘুরে ছোট ছোট ছড়া লাফিয়ে পার হতে হচ্ছে পর্যটকদের। গুলিয়াখালীর মতো নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে এঅবস্থা হতাশাজনক বলে মনে করছেন পর্যটক ও সীতাকুণ্ডের বিশিষ্টজনরা।
গুলিয়াখালীতে ভ্রমণে আসা ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদ বলেন, সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিচে যেতে হয়েছে যা অত্যন্ত কষ্টকর এবং বিরক্তিরও বটে। অল্প সময়ের পথ যেতে ৩ গুণ সময় লেগেছে। সাঁকোটি সংস্কার করা না হলে পর্যটকরা গুলিয়াখালীর মতো দর্শনীয় স্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। গুলিয়াখালীতে আসা ঢাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সৈকত মীর, নিভীর আহমেদ জানান, শুনেছি গুলিয়াখালী অনেক সুন্দর তাই ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছি। কিন্তুু এখানে এসে যাতায়াত ব্যবস্থা দেখে খুব দুঃখ পেলাম। এসময় তারা সাঁকোটির স্থলে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। স্থানীয়রা জানান, সাঁকোটি ভাঙ্গা হওয়ায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নৌকা দিয়ে পর্যটকদের সৈকতের পাশে নিয়ে যাচ্ছে। এতে যাত্রী প্রতি ৩০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। বর্তমানে ওই সাঁকোর নিচে পানি কমে যাওয়ায় এখন নৌকাও চলাচল করতে পারছে না।
এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দার এম কে মনির বলেন, সাঁকো ভেঙে যাওয়া ও দীর্ঘ কাদা মাটির পথ অতিক্রম করে বিচে যাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। যেখানে গুলিয়াখালী ও চন্দ্রনাথ পাহাড় সীতাকুণ্ডের সুনাম বয়ে আনছে সেখানে এমন অবস্থা সীতাকুণ্ডের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। সত্যিকার অর্থে এখানে প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে শত শত পর্যটক আসলেও এখানকার ব্যবস্থাপনা দেখার কেউ নেই। তিনি গুলিয়াখালীর দুর্ভোগ নিরসনের দাবি জানান। সীতাকুণ্ড নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চাইলে সাঁকোটি সংস্কার করে দিতে পারেন। এটি সংস্কার করা হলে পর্যটকরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন।
স্থানীয় মুরাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যটকদের ভিড় কম। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এটি সংস্কার করা হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, গুলিয়াখালীকে সরকার পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এখনও ঘোষণা করেনি। এটি উপকূলীয় বন হওয়ায় বন বিভাগের অধীনে রয়েছে। সুতরাং এখানে সাঁকো সংস্কার বা নির্মাণের সুযোগ নেই।