চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসার আভাস বহাল রেখেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। গতকাল আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাটির প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে চলতি অর্থবছরের শেষে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস জানুয়ারির মতোই থাকবে বলে জানিয়েছে। তবে তা অক্টোবরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কম।
আইএমএফ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অক্টোবরের প্রতিবেদনে ৬ শতাংশের আভাস দিয়েছিল। কোভিড মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের পথে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটে বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপক চাপে পড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা কমাতে আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাটি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। সংস্থাটির পরামর্শ মেনে আর্থিক খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারও শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। ব্যয় সাশ্রয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতি আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। অর্থনীতির এমন প্রেক্ষাপটে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছর শেষ হওয়ার দুই মাস আগে দেওয়া আইএমএফের প্রবৃদ্ধির এ পূর্বাভাস সরকারের লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম। তবে বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সবশেষ পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য বেশি।
সম্প্রতি পৃথক প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং এডিবি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। ২০২১–২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।
‘নড়বড়ে পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক সবশেষ এ ইকোনমিক আউটলুকে আইএমএফ ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে, যা সামান্য বেড়ে পরের বছর ৩ শতাংশ হবে। তবে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি যতটা আশা করা হয়েছিল তার চেয়ে আরও ধীরগতিতে কমবে বলে আশা প্রকাশ করছে সংস্থাটি। ২০২২ সালের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হবে।
এর আগে জানুয়ারিতে যখন বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ হয়, তখন চার দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল আইএমএফ। ওই সময় বৈশ্বিক অর্থনীতির টানাপড়েনের প্রভাবে সামনের দিনগুলোতে আরও খারাপ সময়ের এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
সবশেষ প্রতিবেদনে সংস্থাটি মূল্যস্ফীতি আগের চেয়ে কমার আভাস দিয়ে বলেছে, অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি হবে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরের ২০২৩–২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
কান্ট্রি রিপোর্টে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ির কারণে বাংলাদেশের চলতি লেনদেন ভারসাম্যের হিসাবেও উন্নতি হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বছর শেষে তা জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে, যা আগের অর্থবছরে জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ ছিল।
বিশ্বজুড়ে উচ্চ সুদহার ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে চাপে ফেলার কারণে আর্থিক খাতের আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির আভাসও কিছুটা কমিয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আগামীতে আর্থিক খাতের চলমান সংকট আরও তীব্র হওয়ার শঙ্কার কথাও সবশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এটি মন্দার কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে। এতে কঠোর আর্থিক নীতির কারণে ২০২২ সালের ৩ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়ে প্রবৃদ্ধি আরও কমার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।