‘প্রবীণরা করুণা চায় না, চায় প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার নগরীতে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করে ‘দি সিনিয়র সিটিজেন সোসাইটি-চট্টগ্রাম’ আলোচনা সভার আয়োজন করে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ‘ডিজিটাল সমতা সকল বয়সের প্রাপ্যতা’ শীর্ষক আলোচনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দি সিনিয়র সিটিজেন সোসাইটি-চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক লায়ন এম সামশুল হক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক ভাতা প্রবর্তনসহ প্রবীণবান্ধব অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ও পিতা মাতার ভরণপোষণ আইন অন্যতম। ইতোমধ্যে সরকার সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারকে ‘প্রবীণ বিষয়ক আইন’ প্রণয়ন করে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা সুরক্ষার অঙ্গীকার প্রদানে নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রবীণদের হাসপাতাল, বিমানবন্দর ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রবীণদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া দরকার। সররকারিভাবে প্রবীণদের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার এবং প্রবীণ ফাউন্ডেশন গঠন করা দরকার। সভাপতির বক্তব্যে ‘দি সিনিয়র সিটিজেন সোসাইটি-চট্টগ্রামের সভাপতি ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, একটা কাজ যদি এখনো না করে থাকেন, তাহলে করবেন না। এরমধ্যে নিশ্চয় অনেকে করে ফেলেছেন। কাজটা হলো-সম্পত্তিটা কখনো কারো নামে লিখে দিবেন না। দলিলটা লিখলেও ছেলে মেয়েদের জানাবেন না। সেটি লিখে উকিলের কাছে রেখে দিবেন। তাহলে কিন্তু যথেষ্ট আরামে আয়াসে ছেলে, ছেলের বউ সবার সাথে থাকতে পারবেন। কারণ একটাই আশা, বাবা মরলে সম্পত্তি আমি পাবো। কিছুদিন আগে একটা বিজ্ঞাপন হয়েছে, হয়তো দেখেছেন, ছেলে তার বাবাকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাচ্ছিল, বের হতেই গাড়িতে উঠবে, এমন সময় ছেলে (অর্থাৎ যাকে নিয়ে যাচ্ছে তার নাতি) তার বাবাকে বলছে, বাবা কোথায় যাচ্ছো? তখন তিনি জবাব দিলেন-তোমার দাদাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে যাচ্ছি। উনি ওখানে থাকবেন, আমরা ওনার খরচ দিবো। ছেলে তখন পাল্টা প্রশ্ন করেন-তাহলে বাবা বুড়ো হলে তোমাকেও আমরা ওখানে দিয়ে আসবো? এটা বলার পরে তার হুঁশ আসে। তখন সে আর তার বাবাকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাননি। আমাদেরকে কেন তারা বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাবে না, নিশ্চয়ই নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমি বা আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের ক্লাশ থ্রি-ফোর থেকে দার্জিলিং কিংবা শিলংয়ের স্কুলে পড়ার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। সে তো তখন থেকে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেলো। ওখান থেকে আবার তাকে আমরা আমেরিকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখন সে আমেরিকা পছন্দ না করে আমাকে আপনাকে বেশি পছন্দ করবে? আগে আমাদেরকে ছেড়ে যেতে পারেনি কেন, আগে আমরা পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। এখন কিন্তু সেটি আর নেই। আমরাই কিন্তু তাদেরকে এক সময় দূরে সরিয়ে দিয়েছি। এখন বুড়ো বয়সে বলছি-আমাকে আমার ছেলে দেখে না। দোষ কিন্তু আমাদের। তবে ওই যে ফিউচার বলে একটা কথা আছে, আমাদের ফিউচার গঠন করতে হবে। ফিউচার গঠন করতে গিয়ে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে এটা আমরা দেখছি না। একটা বিষয় হচ্ছে- মরার আগে কখনো মরবেন না। আমরা মরার আগে হাজার বার মরে যাই। কেন মরবো। হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। যেদিন মরার সময় সেদিনই মরবো। এটি নির্ধারিত। এটা যদি আমরা নোটবুক ধরি, তাহলে প্রথম পৃষ্ঠা এবং শেষ পৃষ্ঠা লেখা হয়ে গেছে, মধ্যখানে খালি আছে। সেই খালি জায়গায় যদি আমরা কোনো ভালো করি, তাহলে মানুষজন বলবে এই লোকটা ভালো ছিল। আপনারা জানেন আমাদের ইম্পেরিয়াল নামে একটা হাসপাতাল আছে। সেখানে আমরা চেষ্টা করবো প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড দিতে। বর্তমানে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে যেসব সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। ইম্পেরিয়ালে গেলে মনে হয় পয়সা খরচ বেশি হবে, আসলে পয়সা বেশি খরচ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ওখানে সব সেবার মূল্য নির্ধারিত। একই মানের হাসপাতালের চেয়ে ইম্পেরিয়ালে খরচ কম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, প্রফেসর ড. মো. আলী চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার আসাদ উল্লাহ, ডা. দুলাল দাশ, মীর ফজলে আকবর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহম্মদ ও পিডিজি সিরাজুল হক আনসারী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এ এম কামাল উদ্দিন, এমদাদ হোসেন, মো. নুরুল আলম, পিনাকী দাশ, ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান, সিরাজুল করিম মানিক, গোলাম মহিউদ্দিন বাবুল, মো. আবু বকর সিদ্দিক, তারেক কামাল, ডা. সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর, ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলাম ভূ্ঞা, ডা. মো. আবু তৈয়ব, মো. হারুন ইউছুফ, এম এ মোতালেব, ইততাই রাব্বি ফারুক, মো. ইয়াছিন চৌধুরী, মো. আলী প্রমুখ।