মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল পেতে বাঁশখালী পেকুয়া হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়ে আনুন
সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি অক্টোবরের ২৮ তারিখ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন বলে জানতে পারলাম। দেশের কল্যাণে এই মেগা প্রকল্পের মৌলিকভাবে সুফল দুটি:
১. চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে সম্প্রসারিত হওয়া।
২. দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা বাসীকে যাতায়াতের সুফল দেওয়া।
সুফলের প্রথমটি হয়ত পর্যায়ক্রমে বাস্তব রূপ লাভ করবে, কিন্তু দ্বিতীয়টির সুফল মনে হয় সুদূর পরাহত। বঙ্গবন্ধু টানেল এর অবস্থান বঙ্গোপসাগরের নিকটে, বিমানবন্দরের নিকটতম স্থানে। ফলে টানেল কর্তৃপক্ষকে দক্ষিণ পার্শ্বে ৫/৭ কি.মি. সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে আনোয়ারা উপজেলার অনেকটা মধ্যখানে পিএবি সড়ক তথা পটিয়া–আনোয়ারা–বাঁশখালী সড়কে সংযোগ দিয়েছে। ফলে সারা দেশের শত হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু টানেল এর মাধ্যমে কক্সবাজার গমন করতে আরাকান মহাসড়কের (বর্তমান চট্টগ্রাম–কক্সবাজার হাইওয়ে) মাধ্যমে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সারা দেশের গণ পরিবহন বাস–মিনিবাস, মাইক্রো, বিভিন্ন মানের কার, পরিবহনের ট্রাক–লরী, কাভার্ড ভ্যান এই শত হাজার যানবাহন ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে এসে চট্টগ্রাম মহানগরকে বামে রেখে, বঙ্গোপসাগরের তীর দিয়ে, বিমানবন্দরের নিকটে বঙ্গবন্ধু টানেল অতিক্রম করে, আনোয়ারার মধ্যখানে গোল চত্বরে আসবে।
এসকল শত হাজার যানবাহন এখান থেকে বাঁশখালী–পেকুয়া সরু প্রধান সড়ক দিয়ে কক্সবাজার যাবে অনেকটা নিশ্চিত যেহেতু দূরত্ব অনেক কম এদিক দিয়ে ফলে টানেল কর্তৃপক্ষ বা সেতু বিভাগ কে আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া সরু প্রধান সড়ক দ্বিগুণের বেশি প্রশস্ত করা অতীব জরুরি। কিন্তু টানেল সংশ্লিষ্ট এ জরুরি কাজের আজও কোন খবর নেই।
আগামী ক’দিনের ব্যবধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টানেল উদ্বোধন করে দিলে সাথে সাথে সারাদেশের শত হাজার যানবাহন চট্টগ্রাম মহানগরকে পাশ কেটে এ টানেল ব্যবহার করতে শুরু করে দিবে। সারা দেশের এসব যানবাহন আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া সরু সড়কের উপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করে থেমে থেমে ধীর গতিতে যেতে থাকবে। পেকুয়া উপজেলা চৌমুহনী থেকে সোজা দক্ষিণে চলে যাবে এসব শত হাজার গাড়ি।
এখানে চকরিয়া পশ্চিম বড় ভেওলা প্রসিদ্ধ লালব্রীজ নামক স্থানে এসে চকরিয়া–বদরখালী–মহেশখালী আঞ্চলিক প্রধান সড়কের সংযোগস্থলে আসবে। অতঃপর চকরিয়া–রামু ঘুর পথে কক্সবাজার যাবে। আনোয়ারার মধ্যখানে যেখানে টানেল সংযোগ সড়ক মিলিত, এখান থেকে ৭/৮ কি.মি. উত্তর দিকে উল্টোপথে এসে ওয়াই জংশন (ক্রসিং)।
চট্টগ্রাম মহানগর থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পার হয়ে ২/৩ কি.মি. পর ওয়াই জংশন (ক্রসিং)। এ ওয়াই জংশন (ক্রসিং) থেকে ঘুর পথে পটিয়া–দোহাজারী–চকরিয়া আরাকান মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার যাতায়াত করছে, যার দূরত্ব ১৬০ কি.মি. বা কমবেশি।
বঙ্গবন্ধু টানেল অতিক্রম করে আনোয়ারার মধ্যখানে এসে সংযোগ স্থল গোল চত্বর। এখান থেকে ৭/৮ কি.মি. উল্টোপথে ওয়াই জংশন (ক্রসিং) এসে পটিয়া–দোহাজারী হয়ে আরাকান মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার এর দূরত্ব এসে দাঁড়ায় ১৫০ কি.মি. বা কমবেশি।
কিন্তু আনোয়ারার মধ্যখানে টানেল সংযোগ সড়কের গোল চত্বর থেকে আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া হয়ে পশ্চিম বড় ভেওলা প্রসিদ্ধ লালব্রীজ এদিকে সোজাসুজি কক্সবাজার এর দূরত্ব হিসেব করলে দাঁড়ায় মাত্র ৯০ কি.মি. বা কমবেশি।
এখানে এই স্বল্প দূরত্ব কমিয়ে কোটি কোটি জনগণকে সুফল বা আরাম দিতে পশ্চিম বড় ভেওলা লালব্রীজ থেকে সোজা কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩০ কি.মি. নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। কোটি কোটি জনগণের কল্যাণে ৩০ কি.মি. বা কমবেশি রাস্তার নির্মাণ ব্যয় অতি সাধারণ ব্যাপার মনে করি।
বঙ্গবন্ধু টানেল এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার আরাকান মহাসড়ক ব্যবহার করে জনগণকে সুফল দেওয়ার সম্ভাবণা ক্ষীণ।
বঙ্গবন্ধু টানেল শাহ আমানত ব্রীজ বা কালুরঘাট ব্রীজের নিকটে হলে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার আরাকান মহাসড়ক ব্যবহার করে সুফল দেয়া যেত।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু টানেল বঙ্গোপসাগরের নিকটে বিধায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম–কক্সবাজার জেলাবাসীকে সুফল দিতে আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া সরু প্রধান সড়ক অনেকটা ব্যবহার করতেই হবে কক্সবাজার যেতে।
হয়ত টানেল কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার অভাব ছিল বলে বঙ্গবন্ধু টানেল এর সাথে আরো অর্থ সংযোজন করে ন্যূনতম হলেও আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া সরু মহাসড়ক দ্বিগুণ এরও বেশি প্রশস্ত করা উচিৎ ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তা করা হলোনা।
ফলে আনোয়ারার মধ্যখানে টানেল সংযোগ গোলচত্বর যেতে চট্টগ্রাম শহরের দিকে ওয়াই জংশন (ক্রসিং) পর্যন্ত ৭/৮ কি.মি. এবং বাঁশখালী–পেকুয়া হয়ে কক্সবাজারের দিকে প্রায় ১ কি.মি. সাবেক সরু রাস্তাকে ৬ লেইনে উন্নিত করা হয়। সড়ক বিভাগ এই সড়ককে বাঁশখালী পেকুয়া হয়ে ৩০/৪০ কি.মি. বাড়িয়ে দিলে কতইনা উত্তম হত। অন্ততপক্ষে বাঁশখালী পেকুয়ার দিকে ৬ লেইনে উন্নীত না করলেও দ্বিগুণ এর মত প্রশস্ত করে দিতে পারত। কিন্তু তাও করা হল না।
চট্টগ্রাম মহানগর অতিক্রম করে শাহ আমানত ব্রীজ হয়ে ওয়াই জংশন (ক্রসিং) এসে বামে ডানে আনোয়ারার দিকে ৬ লেইন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে বিধায় পটিয়া–দোহাজারী হয়ে ঘুর পথে আরাকান মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার না গিয়ে আনোয়ারার মধ্যখান দিয়ে বাঁশখালী–পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার যাতায়াত অনেকটা শুরু হয়ে গেছে।
আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া প্রায় ৩০/৪০ কি.মি. সরু প্রধান সড়ক, এখানে ঘন ঘন বাজার, গাড়ির স্ট্যান্ড, বসতি; ফলে যানজট লেগেই থাকে। শাহ আমানত সেতু হয়ে সারা দেশের যানবাহনের একটি অংশ দূরত্ব কম বিধায় আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া সড়কের উপর ২/৩ বছর থেকে ভয়াবহ যানজট চলমান।
এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হয়ে গেলে এ পিএবি সড়ক তথা পটিয়া–আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া সড়কের যানজট ভয়াবহ রূপ লাভ করবে।
আবারো উল্লেখ করছি আনোয়ারার মধ্যখানে টানেল সংযোগ সড়কের গোল চত্বর। এখান থেকে বাঁশখালী–পেকুয়া–লালব্রীজ হয়ে সোজাসুজি কক্সবাজার এর দূরত্ব মাত্র ৯০ কি.মি. বা কম বেশি। অপর দিকে এই গোলচত্বর থেকে উল্টো এসে ওয়াই জংশন (ক্রসিং) এর পটিয়া–দোহাজারী আরাকান মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার এর দূরত্ব প্রায় ১৫০ কি.মি. বা কমবেশি।
অতএব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত নিবেদন আনোয়ারার মধ্যখানে টানেল সংযোগ গোল চত্বর থেকে আনোয়ারা–বাঁশখালী–পেকুয়া সরু প্রধান সড়কটি দ্বিগুণের বেশি প্রশস্ত করার জরুরি নির্দেশনা কামনা করছি।
সাথে সাথে পশ্চিম বড় ভেওলা লালব্রীজ থেকে কক্সবাজার মাত্র ৩০ কি.মি. নতুন সড়ক কোটি কোটি জনগণের কল্যাণে নির্মাণ করতে ব্যয় বরাদ্দ দানের বিনীত অনুরোধ রাখছি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট