প্রবাহ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ৮ জুন, ২০২২ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারীতে হজ্বের প্রস্তুতি

করোনা মহামারী কিছুটা কমে এসেছে। ফলে ২ বছরের ব্যবধানে সৌদি সরকার ১০ লাখ নর-নারীকে হজ্ব করতে অনুমতি প্রদান করে। তৎমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন ভাগ্যবান নর-নারী হজ্বে গমন করার সুযোগ পাবে। এতে বড় শর্ত হল বয়স ৬৫ বছরের অধিক হওয়া যাবে না, করোনা টিকার সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

সৌদি সরকার ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে করোনা টিকার শর্ত রাখলেও ৬৫ বছরের উর্ধ্বের বয়স্ক ব্যক্তিরাও ওমরাহ করতে পারছেন।

করোনা মহামারী চলমান বিধায় মসজিদুল হারম ও মসজিদে নববীতে নানান বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। পর্যায়ক্রমে বিধি-নিষেধ অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু আগামী হজ্বের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ কতটুকু থাকে তা এখনই বলা মুশকিল।

বাংলাদেশের হজ্বযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার। ২০২০ সালে ১০ হাজার বৃদ্ধি হয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার এসে দাড়ায়। কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের মহিমা প্রায় ১৩৭ বছরের ইতিহাসে স্বাভাবিক হজ্ব ব্যাহত হয় করোনার কারণে। ২০২০ সালে বিদেশী ত নয়ই সৌদি আরবের অভ্যন্তর থেকে ১ হাজার রাষ্ট্রীয় মেহমান হয়ে হজ্ব করার অনুমতি পায়। তৎমধ্যে হজ্ব করেন ৯৩৭ জন। গত বছর তথা ২০২১ সালে সৌদি আরবের অভ্যন্তর থেকে ৬০ হাজার জনকে হজ্ব করার অনুমতি দান করা হয়। তৎমধ্যে ৫৮ হাজার ৫ শত ১৮ জন হজ্ব করেন নিজের অর্থে। তবে আগেকার হজ্বযাত্রীগণের মত এ হজ্বযাত্রীগণও খাদ্য সামগ্রীসহ নানান সহযোগিতা পেয়েছিলেন সৌদি বড় বড় কোম্পানী হতে।

হজ্বের ইতিহাসে বেশ কয়েকবার হজ্ব কার্যক্রমে চরম প্রতিকূলতার কথা রয়েছে। এই নিয়ে রয়েছে বিস্তৃত বর্ণনা।

তবে সর্বশেষ ১৮ শতকের ১৮৪৬ সালেও পবিত্র মক্কায় রোগ ব্যাধিসহ নানান প্রতিকূলতা দেখা যায়। পরবর্তীতে ১৯২৫ সালে প্রতিকূলতা আসলেও হজ্ব কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত হয়নি। ১৯৭৯ সালে হজ্বের ২ সপ্তাহ পর মসজিদুল হারমে ফজরের নামাজের সময় ধর্মীয় উগ্রবাদী কর্তৃক মসজিদুল হারম অবরোধ করা হয়। এ সময় পবিত্র কাবাসহ মসজিদুল হারমে ২ সপ্তাহের জন্য নামাজ তাওয়াফ বন্ধ থাকে। উভয়পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা পরাস্ত হয়। অর্থাৎ হজ্বের ইতিহাসে নানান প্রতিকূলতা এসে থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে বিগত ২ বছরের হজ্ব কার্যক্রমে বিদেশীরা আসতে পারেনি এই রকম প্রতিকূলতা ১৩৭ বছরের ইতিহাসে ঘটেনি।

করোনা মহামারী কিছুটা কমে আসায় চলতি বছর সৌদি সরকার হজ্ব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক অনেক বিলম্ব করে ফেলে। সৌদি সরকার অনেক ভেবে চিন্তে বিলম্ব হলেও ১০ লাখ মুসলিম নর-নারীকে হজ্ব করার অনুমতি দেয়। তৎমধ্যে বাংলাদেশের কোটা ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন। সরকারীভাবে ৪ হাজার জন, বেসরকারী কাফেলা এজেন্সীর মাধ্যমে ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজ্বযাত্রী হজ্বে গমনের প্রস্তুতি শুরুর দিকে।

এ বছর হজ্ব করতে টাকার অংক অত্যধিক। করোনা মহামারীর আগে মধ্যবিত্তরা ৩ লাখ টাকা বা কম বেশি দিয়ে হজ্ব করতে পারতেন। এখন ন্যূনতম প্রায় ৫ লাখ টাকার উর্ধ্বে।

হজ্বের নিয়ন্ত্রণ করোনার আগে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা। বিশেষ করে ঘরের ক্ষেত্রে। তবে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ সচেতন থাকলে ফ্লাইট সিডিউল অনিয়ম না হওয়ার সম্ভাবনা। যেহেতু করোনার আগে দেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার জন হজ্ব করতেন সেখানে অর্ধেকের চেয়ে কম সংখ্যক হজ্বযাত্রী গমন করতেছেন।

বাংলাদেশ বিমান চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে জেদ্দার পাশাপাশি পবিত্র মদিনায় ফ্লাইট যাতায়াতে অত্যধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে যারা হজ্বের আগে আকাশপথে পবিত্র মদিনা যাবেন তারা হজ্বের পর জেদ্দা থেকে দেশে ফিরবেন। অপরদিকে যারা হজ্বের আগে জেদ্দা হয়ে হজ্ব করবেন, তারা হজ্বের পর পবিত্র মদিনা গিয়ে যেয়ারতের পর আকাশপথে দেশে ফিরতে পারবেন। এক্ষেত্রে পবিত্র মদিনায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যার উপর অনেকটা নির্ভর করবে।
সৌদি এয়ার লাইন্স হজ্ব ও ওমরাহকারীর ক্ষেত্রে ঢাকা-জেদ্দা ফ্লাইটের উপর নির্ভরশীল রাখে। সৌদি এয়ার লাইন্সের প্রতি নিবেদন থাকবে তারাও যাতে হজ্ব ওমরাহকারীর ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও পবিত্র মদিনা বিমান বন্দর হয়ে ফ্লাইট চলাচলের উপর গুরুত্ব দেয়। দেশের হজ্বযাত্রীরা অনেকটা সচেতন। যারা হজ্বের আগে মদিনা শরীফ যাবেন তারা দেশ থেকে এহরাম পরিধান করবেন না। মদিনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ আসতে যুলহুলায়ফা মিকাত থেকে এহরামের নিয়ত করতে হবে। এ এহরাম ওমরাহরও হতে পারে হজ্বেরও হতে পারে।

অপরদিকে যারা হজ্বের আগে জেদ্দা হয়ে মক্কা শরীফ যাবেন তারা ঢাকা বা চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে হজ্ব বা ওমরাহর নিয়তে এহরাম পরিধান করবেন।
চলতি বছর হজ্ব কার্যক্রমে সৌদির নিয়ম শৃংখলার কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও পবিত্র মক্কায় ও পবিত্র মদিনায় সমাগম অর্ধেকের চেয়েও কমে যাবে। তেমনিভাবে পাঁচদিনব্যাপী হজ্ব কার্যক্রমে মিনা, আরাফাত, মুজদালেফায়ও চাপ অর্ধেকের চেয়ে কম থাকবে।

বিগত ১০/১২ বছর আগে হজ্ব করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি কম থাকায় ৩০/৪০ লাখ নর-নারী হজ্ব করতেন। বিগত ১০/১২ বছরের ব্যবধানে সৌদি সরকার হজ্ব করার ক্ষেত্রে অত্যধিক কড়াকড়ি করায় তা ২৬ লাখে নেমে আসে।

অর্থাৎ ১০/১২ বছর আগে ৪০ লাখ, করোনার আগে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৬ লাখ নর-নারী হজ্ব করতেন। সেই স্থলে চলতি ২০২২ সালে মাত্র ১০ লাখ নর-নারী হজ্ব করবেন।

হজ্বের ক্ষেত্রে হজ্বযাত্রীগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যাবশ্যক। যেহেতু তথাকার আবহাওয়া শুষ্ক। হাত পা ফেটে যেতে পারে। ভ্যাসলিন মলম দরকার। পবিত্র মদিনায় পায়ে মোজা আবশ্যক হতে পারে। একক কক্ষে হয়ত কয়জন করে থাকবেন। এসি কমানো বা বাড়ানো নিয়েও একেক জনের একেক রকম চাহিদা।

দমে শুকরিয়া তথা হজ্বের কোরবানী কিভাবে করবেন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। করোনার আগে হজ্বকালীন তথায় অবস্থানের সময় ৪০-৪৫ দিন থাকত। চলতি বছর হজ্বযাত্রী কমে আসায় ৩০-৩৫ দিন বা কম বেশি হতে পারে।

হজ্ব ও ওমরাহকারীগণ মহান আল্লাহ পাকের দাওয়াতী মেহমান। চলতি ২০২২ সালে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ্বযাত্রী নর-নারী বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব বলা যাবে। যেহেতু তারা মহান আল্লাহ পাকের আমন্ত্রিত মেহমান হয়ে তাঁর খাস দরবার পবিত্র কাবায় গমন করার সৌভাগ্যবান। আরও সৌভাগ্যবান হজ্বের আগে বা পরে মদিনা শরীফে গমন করে আল্লাহর হাবীব (স.)’র রওজাপাকে সালাম পেশ করার সৌভাগ্যবান হবেন। যা ইহকাল ও পরকালে কল্যাণকর।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধমালয়েশিয়ায় পি কে হালদারের ৭ বিলাসবহুল ফ্ল্যাট