ওমরাহ ও হজযাত্রী দু’হারমে ও বিমানে সতর্কতা
প্রতিদিন দেশ থেকে শত শত নর–নারী ওমরাহ ও সাথে যেয়ারতের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করছেন। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে হজ। হজপালনের লক্ষ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার আমাদের দেশের কোটায় আজ পর্যন্ত সরকারী বেসরকারী মিলে ৭৬ হাজার ৬ শত ৫ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করে হজে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। হজপালন অত্যধিক ব্যয়বহুল। হজের ব্যয় সরকারীভাবে ন্যূনতম ৪ লাখ ৫০ হাজার বেসরকারীভাবে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকার উপরে। সময় লাগে ৪০ দিন কম–বেশি। ওমরাহর ক্ষেত্রে অন্য দেশে যাত্রা বিরতি করে গেলে টাকা লাগে ন্যূনতম ১ লাখ ২৫ হাজার মত। সময় লাগে প্রায় ২ সপ্তাহ।
হজ ও ওমরাহকারী মহান আল্লাহপাকের আমন্ত্রিত মেহমান। এ সফর এবাদতের সফর, কোটি কোটি সওয়াব লাভের সফর। পরকালে কল্যাণ পাওয়ার সফর। তবে যদি আমাদের এই সফর সুন্দর সুষ্ঠুভাবে ধর্মের নিদের্শনা মতে পালিত হয়। নতুবা টাকাও গেল, সফরও নষ্ট হল, কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণও হতে পারে; আল্লাহ না করুক! হজ ও ওমরাহ যাত্রী উভয়ে আকাশপথে সৌদি আরব গমন করেন। চট্টগ্রাম বা ঢাকা বিমান বন্দরে জেদ্দা বা পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারাগামী ফ্লাইটে ওমরায় গমনকারীর সংখ্যা চোখে পড়বে, চোখে পড়বে অত্যধিক সংখ্যায়। যদি মাক্সাট, সারজাহ, দুবাই, কুয়েত এসব দেশের ফ্লাইট হয়, এখানেও ওমরাহকারী চোখে পড়বে হয়ত সংখ্যায় কম। আমাদের দেশ থেকে বিমান বা সৌদি এয়ারলাইন জেদ্দা গেলে বিমান বন্দরে এহরাম অবস্থায় চোখে পড়ে। আর সরাসরি পবিত্র মদিনায় গেলে তবে সাধারণ পোশাকে যাবে। পবিত্র মদিনা থেকে পবিত্র মক্কা আসতে এহরাম পরিধান করবে।
ওমরাহ এর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২/৩ ঘণ্টা বা আরও আগে বিমান বন্দরে পৌঁছতে হয়। হজের ক্ষেত্রে ৩/৪ ঘণ্টা বা আরও আগে।
হ আপনি ঘর থেকে বিমান বন্দরে যাওয়ার সময় আগে জেদ্দা গেলে, আপনার হ্যান্ড বেগে এহরামের ৩ পিচ কাপড় থাকবে। মহিলা হলে এক সেট পরিধানে থাকবে, আরেক সেট হ্যান্ড ব্যাগে থাকবে।
হ জেদ্দার ফ্লাইট হলে বিমান বন্দরে যাওয়ার আগে এহরামের প্রস্তুতি হিসেবে সুন্নত আমল সম্পন্ন করতে হয়।
হ নামাজের টাইম নিয়ে সজাগ থাকতে হবে। যাতে বিমান বন্দরে পৌঁছতে বা বিমান বন্দরে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে নামাজ কাজা না হয়।
হ বিমান বন্দর থেকে খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। যাতে বিমানের অভ্যন্তরে টয়লেট ব্যবহার করতে না হয়। যে কোন নামাজীর ক্ষেত্রে বিমানের অভ্যন্তরীণ টয়লেট সুবিধার না। টয়লেট ব্যবহার করা না করা নির্ভর করবে আপনার খাবারের উপর।
হ বিমানের খাবারে সাধারণত সবজি, মুরগি অথবা গরু বা ছাগলের গোশত থাকে। মুরগি পরিহার করে অন্য কিছু খাওয়া উত্তম হবে। যেহেতু বড় এয়ারলাইনে দৈনিক হাজার হাজার মুরগি লাগে। একালে আধুনিক সিস্টেমের জবেহ করা নিয়ে ধর্মে মতে মতপার্থক্য রয়েছে।
হ বিমানের ভিতর অথবা ট্রানজিট যাত্রী হলে মাস্কাট, দুবাই, সারজাহ, কুয়েত বিমান বন্দরে নামাজের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
হ বিমানের অভ্যন্তরে নামাজের টাইম হলে কেবিন ক্রুরা মাটি দিবে। তায়াম্মুম করে কছর নামাজ হিসেবে পড়ে নিতে হবে।
হ দেশ থেকে যাওয়ার আগে ওযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা শিখে নিতে হবে।
হ জেদ্দা থেকে পবিত্র মদিনা যেতে নামাজের ওয়াক্ত ভেদে ওযু রাখতে হবে। জেদ্দা থেকে পবিত্র মক্কা পৌঁছতে ১ ঘণ্টার যাত্রা হলেও ২/৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। পবিত্র মদিনা বিমান বন্দর হলে সময় লাগে আধাঘণ্টা বা কম বেশি। হজের ক্ষেত্রে ভিন্ন।
হ আরবের পবিত্র নগরীতে পৌঁছলে যতটুকু সম্ভব কাফেলার লোকজনের সাথে সহাবস্থানে থাকা বাঞ্চনীয়।
হ পবিত্র মক্কায় পুরুষেরা মাতাফে গিয়ে ওমরাহ পালন করে। শুধুমাত্র পুনঃ এহরামের কাপড় পড়ে না যাওয়া চাই।
হ পুরুষ মাতাফে গমন বিষয়ে সৌদি সিদ্ধান্ত সঠিক হোক বা না হোক তা হজ ও ওমরাহকারীর কল্যাণে তাতে সন্দেহ নেই।
হ মহিলাগণ জানাযার নামাজ শিখে নিতে পারলে ভাল হয়। উভয় হারমে ফরজ নামাজের পরপর প্রায়ই জানাযা পড়ার মাইকে ঘোষণা হয়। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে ইমামের সাথে তাকবীর বললেই জানাযার সাওয়াব পাওয়া যায়। যা লাখ লাখ সাওয়াব।
হ পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববীতে রিয়াজুল জান্নাতে যেতে কাফেরার দিক নির্দেশনা মানতে হবে।
হ পবিত্র মক্কা থেকে পবিত্র মদিনা যেতে বা পবিত্র মদিনা থেকে পবিত্র মক্কা আসতে কাফেলার বাসে ৫/৭ ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় নেয়। এ সময় নামাজের ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে। যাতে কাজা না হয়।
হ তায়েফ গেলে সাথে এহরামের কাপড় রাখতে হবে। ফিরবার সময় ওমরাহ এর নিয়তে এহরাম পরিধান করতে হবে। জেদ্দা গেলে ওমরাহ করাও যায় না করাও যায়।
হ দেশে ফিরার সময় লাগেজ থাকে বেশি। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিমানে উঠতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর বিমান প্রদত্ত খাবার খেয়ে শরীর ক্লান্তের সাথে অতীব ভারী হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও নামাজের টাইম হলে কাজা করা যাবে না। দেশে ফিরে বিমান বন্দর থেকে বাসায় ফিরতে নামাজের বিষয় সাবধানতা অবলম্বন করতে।
বস্তুত হজ ও ওমরাহকারী পরকালীন কল্যাণে টাকা খরচ করে সফর করতেছেন। সফর মানে কষ্ট। অতএব সফর যাতে কল্যাণকর হয় কারও সাথে ঝগড়া বিবাদ না হয়, নামাজ যাতে কাজা না হয় তা সজাগ থাকতে হবে।
আরও সজাগ থাকতে হবে মসজিদুল হারম ও মসজিদে নববীতে এক ওয়াক্ত নামাজও যাতে না ছুটে।
পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনা হজ ও ওমরাহকারীগণ হুদুদের ভিতর অবস্থান করেন। হুদুদ অর্থ সীমানা। পবিত্র মক্কায় হুদুদের ভিতর যে কোন ভাল কাজ করলে ১ লক্ষ গুণ সাওয়াব। তা নামাজ হোক, রোযা হোক, দান হোক। এখন আপনি যদি মসজিদুল হারমে জামাতে নামাজ পড়েন তাহলে কোন কোন মতে ৫ শত গুণ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ৫ শত লক্ষ। আল্লাহর কোন কমতি নেই। আল্লাহ গফুরুর রহীম, রহমানুর রহিম। হজ ও ওমরাহ এর ক্ষেত্রে তাওয়াফে সায়ীতে পবিত্র রওজাপাকে সালাম পেশ করতে আজকে থেকে শত বছর, হাজার বছর আগে মহান ইমাম, মুফতি, মুহাদ্দেসগণ কিছু দোয়া দরূদ লিখে গেছেন। সেই মতে পড়লে আবেগ এসে যায়, মন দুর্বল হয়ে যায়।
আমিও অনেক কষ্ট স্বীকার করে একটি দোয়ার পুস্তক সংকলন করি। আল্লাহপাকের মেহেরবাণীতে ইহা ব্যাপক প্রচারিত সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য। নাম দেয়া হয় “তাওয়াফ ও যেয়ারত”। ভাল মনে করলে বিনা হাদিয়ায় সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮৪১–২৪৪৩৫৫। হজ ও ওমরাহ বিষয়ে কারও কোন জানবার থাকলে মোবাইলে আলাপ করতে পারেন।
মহান আল্লাহপাক হজ ও ওমরাহকারীগণের এই ব্যয়বহুল কষ্টসাধ্য সফর কবুল করুক। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট।











