প্রবাহ

হজের কাফেলা নির্ধারণ প্রসঙ্গে

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ১৬ জুলাই, ২০২৫ at ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

আগামী বছর তথা ২০২৬ সালে হজে যেতে মনস্থ করে থাকলে কাফেলা নির্ধারণ করতে একটু সময় নেন, বিবেচনা করুন। বিভিন্ন হজ কাফেলা তথা হজ এজেন্সী প্রাক নিবন্ধন করে নিতে ফেসবুক, ইউটিউবে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাকনিবন্ধন করা যায়। আপনি ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাকনিবন্ধন করে ঐ কাফেলার মাধ্যমে হজে যেতে না চান তাহলে ন্যূনতম হলেও ঝামেলা হবে। বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু (২০২৫) এবং তার আগের হজে (২০২৪) তিন ভাগের এক ভাগ কোটা খালি যাচ্ছে। মনে করি হজ্বের ব্যয় অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় এর মূল কারণ। আগামী বছরের হজেও বাংলাদেশের কোটা পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কাজেই তাড়াহুড়ো করে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাকনিবন্ধন না করাই উত্তম।

সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৮ জুন ২০২৫ সালের সিদ্ধান্তের আলোকে, বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় হতে হজে যেতে চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত সময় সীমা দেয়া হয়েছে। যদিওবা এই সময় ২/৩ বার করে বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ১২ অক্টোবরের তারিখ ধরলেও আরও প্রায় ৩ মাসের মত সময় আছে। কাজেই চটপট না করে একটু ভাবুন। আপনি কি ‘এ’ প্যাকেজে হজ্বে যাবেন নাকি ‘বি’ প্যাকেজে। নাকি ভিআইপি হিসেবে বেশি টাকা দিয়ে শর্ট প্যাকেজে যাবেন।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে শতের কম বেশি সরকার অনুমোদিত হজ কাফেলা বা এজেন্সী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০/৬০ এজেন্সী বা কাফেলা সক্রিয় বলা যাবে। এদের মধ্যে অধিকাংশ কাফেলা বা এজেন্সী এই তিন ক্যাটাগরিতে প্যাকেজ দিয়ে থাকে। তৎমধ্যে ‘এ’ বা ‘বি’ প্যাকেজ ঘোষণা করলেও ভিআইপি শর্ট প্যাকেজটি আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।

হজ্ব হল ৮১৩ যিলহজ্ব ৬ দিনের স্থলে ৮১২ যিলহজ্ব ৫ দিনব্যাপী। সাধারণত হজ্বের ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরির প্যাকেজ হয়ে থাকে ৪০ দিন বা কম বেশি। ৮১২ জিলহজ্ব ৫ দিনব্যাপী হজ্বপালনের আগে পরে বাকী ৩৫ দিন আপনি মসজিদুল হারম ও মসজিদে নববীতে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে সচেষ্ট থাকবেন কিনা তাও আপনাকে এখন ভাবতে হবে। যদি আপনি মসজিদুল হারম ও মসজিদে নববীতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে সচেষ্ট না থাকেন তাহলে আপনি ভিআইপি না হলেও ‘এ’ বা ‘বি’ ক্যাটাগরীতে শর্ট প্যাকেজ করে নিতে পারেন। টাকা বাড়িয়ে দিলে কাফেলা বা হজ্ব এজেন্সী আপনাকে ব্যবস্থা করে দিবে। গত হজ্বে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ্ব্বে গমন করেন। এক এজেন্সী প্রধান বললেন শতকরা ৩০ জনের মত হাজী কাবা শরীফ তথা মসজিদুল হারমে যায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে। আরেক এজেন্সী প্রধান বললেন, আরও কম। বাকী অন্য আরও একাধিক কাফেলা এজেন্সী ও তাদের ধর্মীয় প্রশিক্ষক বললেন ১০/১৫ জনের বেশি হবে বলে মনে হয় না। যদি আপনি হজ্ব করতে গিয়ে হোটেল রুমে নামাজ পড়েন অথবা হোটেলের সামনে রাস্তায় নামাজ পড়েন অথবা রাত দিন মোবাইল, গল্প গুজব, বিশ্রামে থাকা হয়; তবে তাদের ক্ষেত্রে শর্ট প্যাকেজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হাজীদের মানসিকতায় কাজ করে মসজিদুল হারম ১ কি.মি বা কম বেশি দূরে হওয়া, আবহাওয়া অতি গরম। অতএব, ওয়াক্তে ওয়াক্তে জামাত পড়তে কাবা শরীফের দিকে মসজিদে নববীর দিকে যাওয়া কষ্টসাধ্য।

এ প্রসঙ্গক্রমে, কাফেলা তথা এজেন্সীর প্রতি সুপারিশ থাকবে আপনারা ‘এ’, ‘বি’ দুই ক্যাটাগরির মধ্যে এ ক্যাটাগরীর ঘরগুলি মসজিদে হারমে ও মসজিদে নববীর অরেকটু নিকটে নিয়ে নিতে পারেন। গত হজ্বের বাস্তবতায় চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি কাফেলা/এজেন্সী ‘এ’ ক্যাটাগরীতে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা কিছু কম বেশি টাকা নিয়েছে। কাবা শরীফের অনেকটা নিকটে মানসম্পন্ন হোটেলে ব্যবস্থা করেছে। সেই অনুপাতে ৩ বা ৪ বেলা খাবার। চট্টগ্রামের আরও বাকী কাফেলা এজেন্সীর মধ্যে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা কম বেশি টাকা নেয়া হয় ‘এ’ ক্যাটাগরীতে। স্বভাবতই লাখখানেক টাকা কম হওয়াতে তাদের হোটেল কিছুটা দূরত্বে হওয়া স্বাভাবিক। কাফেলা বা হজ্ব এজেন্সীর প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা যাতে এ প্যাকেজটা গত বছর যারা কাছে রেখেছেন তাদের মত আপগ্রেড করে নিলে মনে হয় উত্তম হবে। ৫ দিনব্যাপী হজ্বপালনের পর বাকী ৩৫ দিন হাজীরা যাতে মসজিদুল হারম ও মসজিদে নববীতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যায় সেই নিয়তে এ প্যাকেজের টাকা বাড়িয়ে কাছে হোটেল নির্ধারণ করার জন্য অনুরোধ রাখছি।

যদি কাফেলা এজেন্সীরা ‘এ’ ও ‘বি’ প্যাকেজের ব্যবধান, হোটেলের দূরত্ব, মান, খাবারের মান, এই সব কিছু সুন্দর পরিচ্ছন্নভাবে উল্লেখ করা থাকলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের হজ্বযাত্রীরা তা দেখে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। ‘এ’ প্যাকেজের হোটেলের দূরত্ব, হোটেলের মান, খাবারের মান দেখলে আশা করব হজ্বযাত্রীর আর্থিক অনুকূল এবং হজ্বের পাশাপাশি নামাজের গুরুত্ব থাকলে ‘এ’ প্যাকেজ বেছে নিবে। কাফেলা/এজেন্সীগণের মধ্যে অনেকের মুখে মুখে শোনা যায়, হাজীরা সেবা চায়, মান চায় কিন্তু টাকা দিতে চায় না। অপরদিকে, হাজীদের রাগ ক্ষোভ দুঃখ সাড়ে ৭ লাখ বা কম বেশি টাকা দিচ্ছি অথচ মান সেবা পাচ্ছি না। অমুক অমুক কাফেলা আমাদের চেয়ে কম টাকা নিয়েও ভাল সেবা দিচ্ছে।

হজ্ব ধর্মীয় সফর, এবাদতের সফর, পরকালে নাজাত পাওয়ার প্রচেষ্টার সফর। অতএব সবর, ধৈর্য পরিহার্য।

কাফেলা/এজেন্সীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত হজ্বযাত্রীগণকে নিয়ে সবে মাত্র দেশে ফিরে এসেছেন। তারা একটু ফ্রি হোক, ভেবে চিন্তে আগামী বছর হজ্বের প্যাকেজ ঘোষণা করুক।

অপরদিকে হজ্ব নিবন্ধন সময়সীমা ১২ অক্টোবর ২০২৫। হজ্বে যেতে নিবন্ধনের অনেক সময় রয়েছে। অতএব তাড়াহুড়োর দরকার নেই, একটু ভাবুন চিন্তা করুন। কাফেলা এজেন্সীর প্যাকেজ দেখে তাদের মাধ্যমে হজ্বের টাকা জমা করুন।

বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক শহরে বন্দরে গ্রামে উত্তরদক্ষিণ পূর্বপশ্চিম দিকের উপর বুঝানো হয়েছে। কিন্তু পবিত্র মক্কা মোকাররমা ব্যতিক্রম। এই পবিত্র শহরে চার কোণ হিসেবে নির্ণয় করা হয়েছে। মিসফালাহ, ইব্রাহীমআলখলিল সড়ক, জিয়াদ, গজ্জা, শামেয়া। গজ্জা ও শামেয়ায় এত বেশি সংস্কার করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের হজ্বযাত্রীর ঐ দিকে থাকার অনুকূল পরিবেশ আছে বলে মনে করি না। বাংলাদেশী হজ্বযাত্রীদের বড় অংশ অনেকটা মসজিদুল হারমের নিকটে থাকতে চায়। সেই মতে মিসফালাহ এবং জিয়াদই একমাত্র ভরসা বলা যাবে। জিয়াদে মসজিদুল হারমের নিকটে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। মিসফালায় অনেক হোটেল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, গত হজ্বের পর নাকি আরও ভাঙ্গবে।

তবে জবলে ওমরে নির্মিত পাঁচ তারকামানের হোটেলে পরপর ১০/১৫ টি মানসম্পন্ন হোটেল রয়েছে। এই সব হোটেলে চট্টগ্রামের কয়েকটি এজেন্সী ‘এ’ প্যাকেজ হিসেবে এখানে হজ্বযাত্রীদের রেখেছিল। এই সব হোটেল মসজিদুল হারমের একদম নিকটে। দূরত্বে পরিষ্কার মান উল্লেখ করা থাকলে টাকা ১ বা ২ লাখ অতিরিক্ত হলেও আশা করি এখানে হজ্বযাত্রীরা মেনে নিবেন। এমনিতে চট্টগ্রামের হাজীদের মন বড় উদার বিধায়। বুঝিয়ে দিতে পারলে মেনে নিবে। প্যাকেজে উল্লেখ করে থাকলে এবং হজ্বযাত্রী তা দেখে এবং বিবেচনায় এনে হয়ত প্যাকেজ গ্রহণ করে টাকা দিবে। কিন্তু হজ্বের আগে আগে অতিরিক্ত টাকা হাজীরা সহজে দিতে চায় না। যেমনটা গত ১৫/২০ বছর আগে প্যাকেজ ঘোষণার পর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হাজীদের থেকে প্রায় ২ বছর হজ্বের আগে আগে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়েছিল। এতে হাজীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছে। যা ধর্মমতে কোন পর্যায়ে হবে ভাববার বিষয়। হজ্ব ও ওমরাহ যাত্রীগণ আল্লাহপাকের আমন্ত্রিত মেহমান। তারা ৫ দিনব্যাপী হজ্বের আগে পরে পবিত্র মক্কায় ও পবিত্র মদিনায় অবস্থান করবে, বিশেষ ওজর না থাকলে মসজিদুল হারম ও মসজিদে নববীতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাবে না তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আপনি হয়ত শর্ট প্যাকেজ করেন নতুবা হজ্বের আগে গিয়ে হজ্বের পর দেশে ফিরে আসেন। নতুবা মসজিদুল হারম ও মসজিদে নববীতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে সচেষ্ট থাকুন এবং কাফেলা এজেন্সীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে গুরুত্ব দিন।

অর্থাৎ কাফেলা/এজেন্সীর প্রতি সুপারিশ থাকবে তারা যাতে মহান আল্লাহপাকের মেহেমান হজ্বযাত্রীগণ ৫ দিনব্যাপী হজ্ব পালনের পাশাপাশি দুই হারমে নামাজ পড়তে পারার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকেন। অপরদিকে, হজ্বযাত্রীগণের দায়িত্ব হবে কাফেলা/এজেন্সীর প্রতি সহনশীল হওয়া সুন্দর আচরণ করা। ছোটখাটো যে কোন বিষয়ে মাথা গরম না করা, মেনে নেয়া উত্তম হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, গবেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলাবদ্ধতা নয় : এবার আশার আলো
পরবর্তী নিবন্ধটাইগারপাস সড়কে মধ্যরাতে বাইক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত