প্রবাসী আয় বিনিয়োগের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা চলতি অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাইঅক্টোবর) ১০১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে), যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২৪২৫ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বেশি। হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, প্রণোদনা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতির কারণেই রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের এ উচ্চধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেশের আমদানি ব্যয় মেটানোয় সহায়তা করাসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বলা অনাবশ্যক যে, প্রবাসীদের ঘাম ঝরানো কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। দেশের অর্থনীতি যখন নানা চাপে বিপর্যস্ত, তখন রেমিট্যান্সের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ নিয়ে এসেছে এক স্বস্তির বার্তা। আর এ কৃতিত্বের হিরো প্রবাসীরাই। অর্থাৎ দেশের ডলার সংকট সমাধানে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই রেমিট্যান্স শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি নয়, বরং টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে। ফলে জাতীয় মুদ্রার ওপর চাপ কমেছে। এছাড়াও, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা ও ঋণের মাত্রা বৃদ্ধির মতো ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য এবং বৈদেশিক মুদ্রার একটি শক্তিশালী ও টেকসই প্রবাহ নিশ্চিত করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সরকার প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে এবং জাতির সর্বাধিক সুবিধার্থে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরিত রেমিট্যান্সের জন্য ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রবাসীরা এখন ‘হুন্ডি’ পদ্ধতি ছেড়ে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১.২৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকাররা বলেন, বিদ্যমান স্থিতিশীল বিনিময় হার রেমিট্যান্স প্রেরকদের বৈধ চ্যানেল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ ব্যাংক ও খোলা বাজারের মধ্যে মুদ্রার দামের পার্থক্য খুবই কম।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, রেমিট্যান্স প্রেরকরা ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে প্রতি ডলার ১২১.৭৫ টাকা সর্বাধিক বিনিময় হার পাচ্ছেন। খোলা বাজারে এই হার প্রতি ডলার ১২২.৫০ টাকা।

তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অপারেটরদের ওপর অভিযান চালানোর ফলে অবৈধ আন্তঃসীমান্ত অর্থ স্থানান্তর চ্যানেল হুন্ডি ও হাওয়ালার চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। সামপ্রতিক মাসগুলোতে রেমিট্যান্সের কারণে ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে অনেক পরিবার প্রবাসী স্বজনদের পাঠানো অর্থের ওপর নির্ভরশীল।

তাঁরা বলেন, এই অর্থের একটি বড় অংশ দৈনন্দিন খরচ মেটাতে ব্যবহৃত হলেও ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যা ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতার সুযোগ তৈরি করছে। বাংলাদেশে রেকর্ড রেমিট্যান্স শুধু একটি স্বল্পস্থায়ী অর্থনৈতিক অর্জন নয়, এটি তাৎক্ষণিক পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে একটি অপরিহার্য লাইফলাইন। তবে তাঁরা উল্লেখ করেন, রেমিট্যান্সের সুবিধাগুলো সমানভাবে বিতরণের দিকে নজর রাখতে হবে, অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে এবং শিক্ষার প্রচারে মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনীতিকে আরো দ্রুত এগিয়ে নিতে হলে আহরিত রেমিট্যান্সকে বিনিয়োগের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে