প্রবাসী আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৯ জুলাই, ২০২২ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে এখন চলছে নানামুখী সংকট। আগে আর্থিক খাতে সীমাবদ্ধতা বা দুর্বলতা থাকলেও বৈদেশিক খাত ছিল শক্তিশালী। কিন্তু এখন বৈদেশিক খাতও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে। এমনকি রপ্তানি আয়ও কমে গেছে আকস্মিকভাবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চার বছর ধরেই টানা বাড়ছিল রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। গত বছর আসে রেকর্ড আয়। অন্য দিকে গত নভেম্বর থেকে প্রতি মাসে গড়ে লাখের বেশি কর্মী গেছেন বিভিন্ন দেশে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ। তাই এ বছরও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু রেকর্ড কর্মী প্রবাসে গেলেও দেশের প্রবাসী আয় কমেছে। এ বিষয়ে অথনীতিবিদদের বক্তব্যও প্রকাশিত হয়েছে নানা পত্রিকায়। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বর্তমানে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে এখন আর শুধু খাত বিশেষে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ নিলে হবে না, দরকার সমন্বিত প্যাকেজ পরিকল্পনা। তা না হলে অর্থনীতিতে সংকট আরও প্রকট হতে পারে।

পত্র-পত্রিকায় খুব গুরুত্বের সঙ্গে বলা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি (বিতর্কান্তরে প্রায় ৭০ লাখ) বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। তাছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এর ভূমিকা বিশাল। রেমিট্যান্স আয়ের ওপর ভর করেই অসংখ্য গ্রামীণ পরিবার অনেকাংশেই সচ্ছলতার মুখ দেখেছে। ফলে শুধু বেকারত্ব কমানো নয়, সামাজিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণেও প্রবাসী আয়ের একটা বড় ভূমিকা আছে।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, রিজার্ভ এরই মধ্যে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে; গত দুই বছরে এ ধরনের ঘটনা প্রথম ঘটল। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, রিজার্ভ যত কমছে ডলারের বাজারেও তত অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে, বিশেষ করে যেগুলোর বেশির ভাগ আমদানি করতে হয়। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা অর্থনীতিতে তো বটেই, রাজনীতিতেও নানামুখী সংকটের জন্ম দিতে পারে।

অর্থনীতি বিশ্নেষক মামুন রশীদ তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, রিজার্ভ কমার পেছনে সবচেয়ে বড় দায় সম্ভবত রেমিট্যান্স হ্রাসের। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আসার প্রধান দুটি দেশ সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। গত অর্থবছরে এ দুটি দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় চার বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকেই কমেছে সোয়া দুই বিলিয়ন ডলার। শতকরা হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স কমেছে সিঙ্গাপুর থেকে। তৃতীয় অবস্থানে তেলসমৃদ্ধ আরব দেশ ওমান। ২০ শতাংশের মতো পতন হলেও টাকার অঙ্কে রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি কমেছে সৌদি আরব থেকে। এদিকে মালয়েশিয়া থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

তবে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এখন প্রবাসী আয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার চেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াতে অনেক বেশি চলে গেছে। সরকারি হিসাবের বাইরে হুন্ডি দিয়ে আসছে। এটা ফিরিয়ে আনতে হলে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা কোনো দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর ব্যবস্থা না। টাকার বিনিময় হার বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখাটাই কাজের কথা। ড. দেবপ্রিয় বলেন, এখন অর্থনীতি যে চাপের মধ্যে আছে এটা সবাই বুঝে। গুরুত্বপূর্ণ হলো- আগে আমার আর্থিক খাতে দুর্বলতা ছিল এবং বৈদেশিক খাত শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এখন বৈদেশিক খাতও দুর্বল হয়ে গেছে। অর্থাৎ অর্থনীতির দুই ইঞ্জিনের মধ্যে এক ইঞ্জিন একটু শক্তিশালী ছিল, এখন দু’টো ইঞ্জিনই দুর্বল হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে অর্থনীতিতে একটি সংকট বিকাশমান। এখন এটার সমাধান হলো- এই সংকটকে স্বীকার করে নিয়ে সর্বমুখী যথাপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে একটু মুদ্রানীতি ঠিক করলাম, এখানে একটু এলসি মার্জিন বাড়ালাম এগুলো বিষয় না, এখানে একটি সমন্বিত প্যাকেজ পরিকল্পনা লাগবে। একটি স্থিতিকরণের ৩ বছর মেয়াদি প্যাকেজ পরিকল্পনা লাগবে। এই মুহূর্তে খাত বিশেষে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ নেয়ার সময় আর নেই। এখন সমন্বিত পরিকল্পনার সময়। এখন শুধু রেমিট্যান্স আয়ের বিষয় না, এখন সামগ্রিক চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হিসাবের বিষয়। সুতরাং শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক না, এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ- এদের মিলে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রানীতি এবং আর্থিক নীতির সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে