প্রবাসী আয় বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে

| মঙ্গলবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

দেশে ধীরে ধীরে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে ঘটনাবহুল আগস্ট মাসের শুরুতে রেমিট্যান্স সংগ্রহ তলানিতে নামলেও মাসের শেষের দিকে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। যার ফলে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে প্রায় ৩১ কোটি ডলার। আগস্টে প্রতিদিন গড়ে ৭ দশমিক ৬৬ কোটি ডলার আসায় মাস শেষে রেমিট্যান্স দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। জুলাই মাসে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেপ্টেম্বরে ব্যয়যোগ রিজার্ভ সংরক্ষণে আইএমএফের ১৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের শর্ত অতিক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগস্টের প্রথম তিন দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ৪ থেকে ১০ আগস্ট এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। প্রথম ১০ দিনে এসেছে মাত্র ৪৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার। প্রথম ১০ দিনে গড়ে এসেছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার। কিন্তু ১১১৭ আগস্ট আসে ৬৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আর ১৮২৪ আগস্ট এসেছে ৫৮ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এই ৭ দিনে গড়ে এসেছে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর শেষ ৭ দিনে (২৫ থেকে ৩১) এসেছে প্রায় ৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গড়ে এসেছে ৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেছেন, এপ্রিল মাস থেকে টানা তিন মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। তবে জুলাইয়ে কিছুটা কমে যায়। মূলত ব্যাংক ঠিকমতো চালু ছিল না। আবার প্রবাসীদের একটা অংশ ঘোষণা দিয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো থেকে বিরত থাকে। তবে সমপ্রতি ব্যাপক হারে রেমিট্যান্স আসছে। এতে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আইএমএফের রিজার্ভ রাখার শর্তও পূরণ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা রফতানি নিশ্চিত বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচিত। শুধু নিশ্চিত বিনিয়োগ নয়, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবেও জনসংখ্যা রফতানিকে বিবেচনা করা যায়। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জনসংখ্যা রফতানির যেমন প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি বিদেশে কর্মরত জনশক্তির পারিশ্রমিক যাতে কাজ ও দক্ষতা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, সেজন্যেও সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, জনসংখ্যা রফতানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার যদি কূটনীতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে, তাহলে জনসংখ্যা রফতানির সুফল ও রেমিট্যান্স প্রবাহ আমাদের অর্থনীতির ইতিবাচক খাতের সঙ্গে একই ধারায় প্রবাহিত হবে।

আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড়, সে অঞ্চলে যুদ্ধবিগ্রহ এবং নানা কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের আয় কিছুটা কমেছে। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বদেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা এড়িয়ে মোবাইল ব্যাংকি, হুন্ডি ইত্যাদি অনানুষ্ঠানিক পন্থার দিকে ক্রমেই বেশি করে ঝুঁকেছেন। ফলে আনুষ্ঠানিক পন্থায় আসা অর্থের পরিমাণ প্রকৃত তথ্য দেখাচ্ছে না। তবে অনানুষ্ঠানিক পন্থায় পাঠানো অর্থ হিসাবে নিলেও প্রকৃত অর্থে আমাদের প্রবাসী আয় তেমন আশাব্যঞ্জন ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু কিছু দেশের প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে দক্ষ ও শিক্ষিত লোকবল বেশি, তাঁদের আয়ও তুলনামূলকভাবে বেশি।

যেহেতু আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা অপরিসীম, তাই এ আয় যেন কখনো না কমে, বরং কীভাবে তা বাড়ানো যায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের ১৯ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনসংখ্যা এখন বিপুল, এই তরুণ শ্রমশক্তিকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা দরকার, যেন তাঁরা বিদেশে চাকরির প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন। আর প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর অনানুষ্ঠানিক পন্থা নিষিদ্ধ বা নিরুৎসাহিত করতে হবে। সে জন্য প্রচলিত ব্যাংকিং পন্থাকে আরও সহজ, দ্রুতগতিসম্পন্ন ও লাভজনক করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে