বাড়ির অসচ্ছলতা দূর করার জন্য, নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে আলোকিত করার জন্য, অনেকে জায়গা জমি সোনা, জমি বিক্রি করে আবার অনেকে ঘরবাড়ি সুদে বন্ধক রেখে অথবা ধার নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেয়। বাস্তবে রঙিন স্বপ্ন দেখে, এইবার নিশ্চয়ই আমার এবং বাড়ির ভাগ্য ঘুরে দাঁড়াবে। সেই আশা নিয়ে প্রবাসে গিয়ে দেখে দালালদের মিথ্যা প্রলোভনের খপ্পরে পরে অধিকাংশ স্বপ্নে দেখা যায় প্রবাসীর করুণ পরিণত ঘটে। যে প্রত্যাশিত বেতন বা চাকরির (কাজ) কথা বলেছিল তার পুরো উল্টো। অনেক শিক্ষিত ছেলেদের সেখানে গিয়ে সর্ব নিম্নমানের কাজ করতে হয়, বেতন খুবই সামান্য। প্রচুর শ্রম দিতে হয়। থাকা খাওয়া নিম্ন মানের। সব সহ্য করে বছরের পর বছর প্রবাসে জীবন কাটাতে হয়। বাড়িতে বা আত্মীয় স্বজনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ হলে সত্য বলতে সাহস পায় না। হৃদয়ের যত কষ্ট ঢেকে হাসি মুখে ভালো থাকার কথা বলে। মাসের শেষে নিজের কিঞ্চিত চাহিদা পূরণ না করে সব টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। মা বাবা স্ত্রী খুব খুশীতে তারা ইচ্ছে মত খরচ করে। আনন্দে করে পাড়াপড়শি আত্মীয় স্বজনকে ছেলের সুনামের কথা বলে। এই দিকে প্রবাসী বুকের কান্না বুকে চাপা রেখে অনেক বছর কাটিয়ে দেয় কিন্তু ইচ্ছা হলেও বাড়ি আসতে পারে না। মা বাবা স্ত্রী পথ পাণে চেয়ে থাকে। কী নিষ্ঠুর জীবন যাপন। বাড়ির সকলের সাথে ভিডিও–তে কথা হলে মনে কষ্ট থাকলেও হাসি মুখে প্রান খুলে কথা বলে। কত কথা হয়, কত বড় বড় পরিকল্পনা হয়। কত চাহিদা বাড়ির সকলের, এক নিমেষে বলে ফেলে তোমাদের সব আশা আস্তে আস্তে পূরণ করবো। পরক্ষণে মোবাইল রেখে অঝোরে নয়নে কাঁদতে থাকে। চোখের জল গড়িয়ে বুক ভিজে যায়। মনে হয় প্রবাসের সমস্ত আলো মুহূর্তেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়। স্বপ্ন এবং পরিবারের চাহিদা পূরণ করা প্রবাসীর কখনই হয়ে উঠে না। কোন একদিন কেউ হয়তো সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরে, কেউ অঙ্গ হারিয়ে, কেউ লাশ হয়ে। কখন যে কি হয়ে যায়, সাজানো স্বপ্নের বনে, ঝড় বয়ে যায়। প্রবাসীর স্বপ্নগুলো বাতাসে ঘুরে নিরন্তর।