প্রবাসীদের সঙ্কট কমাচ্ছে রেমিটেন্সের গতি

| শনিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

মহামারীর মধ্যে দেশে এসে আটকা পড়া প্রবাসীদের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত হওয়ায় চলতি বছর বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহের গতিও কমে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। ‘রিকভারি কোভিড-১৯ ক্রাইসিস থ্রু আ মাইগ্রেশন লেন্স’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক যে প্রাক্কলন দেখিয়েছে, তাতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পেতে পারে, সেক্ষেত্রে ২০২০ সালের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় কম। বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন বলছে, এ বছর ভারতের রেমিটেন্স পৌঁছাতে পারে ৮ হাজার ৭০০ ডলারে, তাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ। আর পাকিস্তানের রেমিটেন্স ২০২০ সালের উচ্চগতি ধরে রেখে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের প্রণোদনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশের রেমিটেন্স যদিও প্রাক মহামারী এবং ২০২০ সালের পর্যায়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বেড়েছে, তারপরও গতি কমে আসার বিষয়টি চোখে পড়ার মত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে মোট ১৮ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। খবর বিডিনিউজের।
পরের বছর মহামারী শুরু হলে অনেকে প্রবাসী আয়ে ধস নামার আশঙ্কা করছিলেন। তবে সব আশঙ্কা পেছনে ফেলে ২০২০ সালে রেকর্ড ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার দেশে পাঠান, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে দেশে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ কমে গেছে। আর কেবল অক্টোবরের হিসাবে রেমিটেন্স কমেছে ২২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের অক্টোবরে যেখানে ২১০ কোটি ডলার দেশে এসেছিল, এ বছর অক্টোবরে এসেছে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশে রেমিটেন্সের গতি ধীর হয়ে আসার যে পরিসংখ্যান এসেছে, তাতে ২০২২ সালের জন্যও ঝুঁকির আভাস মিলছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ জেনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়া এবং মহামারীর মধ্যে দেশে আসা প্রবাসীদের ফেরার ক্ষেত্রে ধীর গতি।
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে সাড়ে তিন কোটির মত বিদেশি কর্মী কাজ করেন, যা বিশ্বের মোট প্রবাসী কর্মীর ১০ শতাংশ। আর এদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। গতবছর মহামারী শুরুর পর তাদের একটি অংশ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন এবং তাদের বেশিরভাগই আর ফিরে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম। আর এ বিষয়টিকেই প্রবাসী আয় কমার বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গতি কমে এলেও প্রবাসীয় আয়ের পরিমাণে এখনও বিশ্বে সপ্তম স্থানটি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন ধরে হিসাব করে গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (নোমাড) দেখিয়েছে, এ বছরের শেষেও সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে থাকবে ভারত। এরপর দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকবে চীন, মেক্সিকো, ফিলিপিন্স ও মিশর। পাকিস্তান ষষ্ঠ এবং বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে থাকবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সম্মিলিত প্রবাসী আয় এ বছর ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৫৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পৌঁছাতে পারে। প্রাক্কলনের এই পরিমাণ আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি এবং মহামারীর গাড্ডা থেকে উঠে আসার ইংগিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্ত্র গুলিসহ গ্রেপ্তার ২
পরবর্তী নিবন্ধদেশে সক্রিয় কোভিড রোগী নেমেছে আট হাজারের নিচে