প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

একটি দেশের চাকা হলো অর্থনীতি। দেশ সচল থাকে এই অর্থের চাকার ওপর। আমাদের অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন বাধাবিপত্তি আছে। সে বিপত্তিগুলো অতিক্রম করতে হবে। প্রথমত, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আমাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আবার দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রেমিট্যান্স। অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থ দেশের আর্থসামাজিক বিকাশে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা নিয়ে আলোচনাটা তাই অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। যদিও দেশীয় শ্রমবাজারে শ্রমশক্তির চাহিদা ও জোগানের সমন্বয়হীনতার কারণে প্রবাসের শ্রমবাজার আমাদের শ্রমশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে একদিকে যেমন প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স সামষ্টিক অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করছে, তাদের পাঠানো অর্থ দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে সৌদি আরবে। সেখানে তাদের সংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন।

এরই মধ্যে একটা আনন্দদায়ক সংবাদ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি দৈনিক আজাদীতে। গত ২০ এপ্রিল ‘রেমিট্যান্সে চট্টগ্রামসহ শীর্ষে ৪ জেলা’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, দেশে রেমিট্যান্সে এগিয়ে রয়েছে চার জেলা। প্রথম স্থানে রয়েছে ঢাকা। এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট। সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে বান্দরবান, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি জেলায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী আয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। এই তথ্য চলতি ২০২২২৩ অর্থবছরের জুলাইমার্চ এই ৯ মাসের।

জুলাই থেকে মার্চএই ৯ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এক হাজার ৬০৩ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলার। ঢাকায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫২২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। চট্টগ্রাম জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, কুমিল্লা জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৯৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার। আর প্রবাসীদের শহর তথা বাংলাদেশের লন্ডনখ্যাত সিলেটের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৮৮ কোটি ৬৫ মার্কিন ডলার। দেশের সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় পাঠানো তিন জেলা হলো বান্দরবান, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি। উত্তরাঞ্চলের একাধিক জেলা ও পার্বত্য দুই জেলার প্রবাসীর সংখ্যা কম। এর প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রেও। যেসব এলাকার লোকেরা নিজ এলাকা থেকে বাইরে যেতে তুলনামূলক কম পছন্দ করেন বা করতেন এবং বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কম সাহসী, সেসব এলাকার মানুষ প্রবাসে কম গেছেন। অন্যদিকে, যেসব এলাকার মানুষের এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই এবং যেসব জেলার লোকেরা আগে থেকেই বিদেশে যান, সেসব জেলা থেকে প্রবাসে যাওয়ার হার বেশি। আর এ কারণেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট জেলায় বেশি প্রবাসী আয় আসে বলে মনে করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশনবিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেমিট্যান্সের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনেক বেড়েছে। জীবন মান উন্নয়নের জন্য এবং আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেক লোক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এবং উদয়াস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করে বৈদেশিক রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন তাদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। এসব বিদেশগামী শ্রমিককে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে বিদেশে পাঠানো হলে তারা আরো ভালো বেতনে চাকরি লাভের সুযোগ পাবেন। দেশও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। প্রতিবেশী ভারত বিশ্বের প্রধান রেমিট্যান্স আয়কারী দেশ। এরপরই রয়েছে চীন। এসব দেশ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে অবস্থান করছে। বিদেশগামীদের অধিকাংশই অদক্ষ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা হাড়ভাঙ্গা খাটনি খেটেও ন্যায্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নানা ধরনের সুযোগসুবিধা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্র তৈরি করলে বাংলাদেশের অর্থনীতির কর্মকাণ্ডকে গতিশীলতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চাইছে, তাতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে