প্রবাসীদের জীবন : নীরব যুদ্ধের গল্প

শিরিন কবির | মঙ্গলবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

প্রবাসীদের জীবন এক নীরব যুদ্ধের গল্প। আমরা শুধু তাদের পাঠানো টাকা বা রেমিট্যান্স দেখি, কিন্তু জানি না তারা প্রতিদিন কত কিছু বিসর্জন দিয়ে দেয়। নিজের স্বপ্ন, নিজের সুখ, নিজের স্বাস্থ্যসব কিছু ত্যাগ করে তারা শুধু পরিবারকে সুখী করতে, মাবাবার মুখে হাসি ফোটাতে, সন্তানদের জন্য ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে প্রবাসে যায়। তারা রোগ, একাকিত্ব, মানসিক চাপ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতাসবকিছু একসাথে মোকাবেলা করে। কখনও হয়তো নিজের বউয়ের ছোটখাটো অবহেলা, কখনও পরিবারের দূরত্বের তিক্ততা, কখনও নিজের ভুলে সৃষ্ট ছোট সমস্যাসব মিলিয়ে তাদের মনে চাপ জমে যায়। কিছু প্রবাসী এমন ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করে যে তারা আত্মহত্যার পথেও যায়। কিছু প্রবাসী বিদেশে প্রয়াণ করেকোনও পরিবার কখনও শেষ মুহূর্তে তাদের পাশে থাকতে পারে না। বিদেশে মৃত্যু বা দাফন, দেশে নিয়ে আসার ঝামেলাসবই তাদের পরিবারকে আরও কষ্ট দেয়। মানসিক ও শারীরিক চাপ, পরিবার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা, নিজের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করাসব কিছু মিশে গড়ে দেয় এক জীবনের ভার। তারা প্রতিদিন লড়াই করে, কঠিন কাজের মধ্যেও ধৈর্য ধরে। অথচ জীবনের শেষ সময়ে তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট অনুভব করে।

আমরা যদি সত্যিই তাদের ভালোবাসি, তাদের পাশে থাকি, তাদের প্রতি দায়বদ্ধ হইতাহলে আমরা তাদের জীবনের এই যন্ত্রণা কিছুটা হ্রাস করতে পারি। আমাদের উচিত: প্রবাসীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করা। পরিবারের ছোট ছোট সুখের মুহূর্তে তাদের সঙ্গে যুক্ত রাখা। বিদেশে প্রয়াণ বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করা। প্রবাসীদের জন্য সচেতনতা তৈরি করা যেন তারা মানসিক চাপ ও একাকিত্বের সম্মুখীন হলে সাহায্য পেতে পারে।

তাদের আত্মসম্মান রক্ষা করা, তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামকে সম্মান দেওয়া।

প্রবাসীদের পাশে যদি আমরা ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা দিয়ে দাঁড়াই, তাদের বোঝাপড়া করি, তাদের ত্যাগকে সম্মান দিইতাহলে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। তারা শান্তি ও সন্তুষ্টিতে জীবনের প্রতিটি দিন কাটাতে পারবে এবং নতুন উদ্দীপনায় এগিয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য থামবে কোথায়
পরবর্তী নিবন্ধঅভিনন্দন জয়িতা