প্রবাল চৌধুরী : বলিষ্ঠ সংগীতশিল্পী

| শুক্রবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ

আজ বলিষ্ঠ সংগীতশিল্পী প্রবাল চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস। তাঁর ভরাট কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছে লাখো শ্রোতা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শিল্পী হিসেবে একক কণ্ঠে, দ্বৈত সংগীতে, সমবেত কণ্ঠে প্রচুর গান পরিবেশন করেছেন তিনি। অনেক কণ্ঠের ভিড়ে তাঁর ভরাট কাঁপা কাঁপা কণ্ঠটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। অনেকের মনেই দাগ কেটেছিল তাঁর গাওয়া বিখ্যাত সেই গানটি ‘ভেবো না গো মা তোমার ছেলেরা হারিয়ে গিয়েছে পথে’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সমর দাস এই গানটি সুরারোপ করেছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারের পর অবরুদ্ধ বাংলাদেশে, এমনকি কলকাতায়ও বহুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল গানটি। আরেক গুণী শিল্পী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার বলেন, প্রবালের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে ওকে ঘিরে! এ মুহূর্তে অনেক স্মৃতি ভাসছে মনের পর্দায়। বয়সে প্রবাল আমার অনেক ছোট হলেও সম্পর্কটা ছিল বেশ গাঢ় আর বন্ধুত্বপূর্ণ। কত অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে গান গেয়েছি। যত দূর মনে পড়ে, ১৯৬৬ কি ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়েছিলাম আমন্ত্রিত হয়ে। সেই অনুষ্ঠানের মূল গায়ক আমি। এক তরুণ মঞ্চে এলো। হারমোনিয়াম রিডে হাত রাখার পরই বুঝলাম, সে আমারই গাওয়া ‘একটি মনের আশীষ তুমি কাছে যখন এলে’ গাইবে। গানটি ছিল ছায়াছবিতে গাওয়া আমার প্রিয় একটি গান। ওর দরাজ কণ্ঠে হৃদয়ছোঁয়া সেই গান শুনে আমি এতটাই অভিভূত হয়েছিলাম যে ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম আবেগে। সেই ওর সঙ্গে প্রথম দেখা আর ঘনিষ্ঠতা। সেই প্রথম দেখাতেই বুঝেছিলাম, প্রবাল চৌধুরী একদিন অনেক বড় শিল্পী হবে। হয়েছিলও। বহু দর্শক-শ্রোতার মন জয় করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশ, এমনকি বাংলাদেশের বাইরেও অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্পী হয়েছিল প্রবাল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চে নিয়মিত গান গেয়েছেন প্রবাল চৌধুরী। চলচ্চিত্রেও ব্যস্ততা বাড়ে। খোন্দকার নুরুল আলম, দেবু ভট্টাচার্য, সমর দাস, অজিত রায়, সত্য সাহা, আনোয়ার পারভেজ, আবদুল আহাদ, আলম খানসহ অনেক নামি সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন তিনি। তাঁর মতো এমন কণ্ঠ আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। ‘কত যে ভালোবাসি তোমাকে’, ‘আমি মানুষের মতো বাঁচতে চেয়েছি এই কি আমার অপরাধ’, ‘আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য’, ‘এই জীবন তো একদিন’, ‘কোথায় যাব বন্ধু বল কোথায় আমার ঘর’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা’র গানের মতো বহু গান আছে তাঁর, যা অগণিত মানুষের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে তাঁকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ব খাদ্য দিবস
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রশাসক সমীপে খোলা চিঠি