প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী : কীর্তিমান কার্টুনিস্ট

| বৃহস্পতিবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী কার্র্টুনিস্ট, অধ্যাপক ও শিশুসাহিত্যিক। ‘কাফি খাঁ’ বা পিসিয়েল নামে সমধিক পরিচিত। বাংলার প্রথম এডিটোরিয়াল কার্টুনিস্ট। প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ীর জন্ম ১৯০০ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা শহরে তার মাতুলালয়ে। পিতার নাম ফনীন্দ্রনাথ লাহিড়ী, মাতার নাম গিরিবালা দেবী। ছোটবেলায় তিনি পড়াশোনায় ভালই ছিলেন। ইতিহাস বিষয় নিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীতে এম.এ পাশ করেন। ইতিহাসে এম.এ পাশের পর ফেনি কলেজে ইতিহাস ও সিভিঙ বিষয়ে অধ্যাপনার মধ্যদিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি শখের আঁকাআঁকিও চালিয়ে যান। অধ্যাপনা করার সময়েই তার প্রথম কার্টুন বেরোতে শুরু করেছিল শনিবারের চিঠি পত্রিকায় প্র-চ-লা ছদ্মনামে। তার প্রতিভা ইতিমধ্যে নজরে এসেছিল সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের। তার আহ্‌বানে এবং কলেজের সহকর্মী গোপাল হালদারের পরামর্শে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি কলকাতায় চলে আসেন প্রফুল্লচন্দ্র। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে অমৃতবাজার পত্রিকায় যোগ দিয়ে তার ইংরেজি নামের আদ্যাক্ষর (পিসিয়েল) ছদ্মনামে অদ্ভুত চরিত্রের ‘খুড়ো’-র স্ট্রিপ কার্টুন আঁকেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর পত্রিকা চালু হলে তিনি তাতে ‘কাফি খাঁ’ ছদ্মনামে ‘শেয়ল পণ্ডিত’ এর স্ট্রিপ কার্টুন ও রাজনৈতিক কার্টুন আঁকতে থাকেন। ‘খুড়ো’ আর ‘শেয়াল পণ্ডিত’ এর মতো অবিস্মরণীয় দুটি কমিক-স্ট্রিপ চরিত্র তাঁকে খ্যাতি প্রদান করে। পরে প্রতি রবিবারে রামায়ণ ও মহাভারতের কথা, পুরোনো দিনের নানা কথা এবং শিক্ষাপ্রদ নানা বিষয় নিয়ে রেখাচিত্র এঁকেছেন। মহাকাব্য দুটির ঘটনা ও চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটিয়ে মজাদার ও কিম্ভুত পরিবেশ সৃষ্টিতে তার জুড়ি ছিল না। তার উল্লেখযোগ্য চিত্রকাহিনিগুলি হল – ‘মাস্টারবাবু’, ‘ট্রলিবাবু’, ‘রিকশাওয়ালা’, ‘মহাভারতের কথা, ‘সবজান্তা রাজা’, ‘ভীমের গল্প’, ’কুম্ভকর্ণের কাণ্ড’, ‘মহাভারতের বনপর্ব’, ‘দুই বোকার গল্প’ ইত্যাদি। বিজ্ঞাপনে কার্টুনের ব্যবহার তার একটি অনন্য কীর্তি। তিনিই দেশে প্রথম বিজ্ঞাপনে কার্টুনের ব্যবহার শুরু করেন। কত অজস্র পণ্যসামগ্রীর জন্য যে তিনি কার্টুন এঁকেছেন তার ইয়ত্তা নেই। ছোটদের জন্য তিনি বেশ কিছু বই লিখেছিলেন। তার আঁকায় ও লেখায় সমৃদ্ধ ‘ছবি কথা’ বইটিতে পাতায় পাতায় ছবি এঁকে বুঝিয়েছিলেন কী ভাবে রেলইঞ্জিন কাজ করে, মোটরগাড়ি চলে বা এরোপ্লেন ওড়ে। দেশের মনীষীদের জীবন নিয়ে লিখেছেন- ‘সুভাষ-আলেখ্য’. ‘দধীচির অস্থি’, ‘সত্যের সন্ধানে’, ‘জীবনাবসান’। প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী ১৯৭৫ সালের ২৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতুর্কমেনস্তানের স্বাধীনতা দিবস ও বিশ্বসমুদ্র দিবস
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা