প্রধান বিচারপতির আহ্বান শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, সময়োপযোগীও

| বৃহস্পতিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মেনে, স্বাধীনতা যুদ্ধে তার নেতৃত্বকে মেনে সব দলকে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের অডিটোরিয়ামে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, তাদের বলতে চাই তার নেতৃত্বের গুণাবলীর মধ্যে ঘাটতি কতটা ছিল। যদি ঘাটতি না থেকে থাকে তাহলে একাত্তরকে স্বীকার করে নিয়ে তারপর বাংলাদেশে রাজনীতি করেন, দেশের সংবিধান মেনে নিয়ে। যদি আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, বহু দলে বিশ্বাস করি, তাহলে সহনশীল হতেই হবে। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করব আর সহনশীল হবো না, এটা গণতন্ত্রের চর্চা বলা যাবে না। গণতন্ত্রকে যদি আমরা ধারণ করি, তাহলে আমাদের ভেতর যে দূরত্ব আছে সেটা কমে আসবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়েছিলেন, যে কারণে বঙ্গবন্ধু শহিদ হয়েছেন, আমার মনে হয় সেই লক্ষ্যটা পূরণ করতে পারব। আমার মতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে এই জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য। ঠিক সেই হিসাব নিকাশ করেই ৩ নভেম্বর যে হত্যাকাণ্ড করা হয়, যাতে জাতি দিন দিন ধ্বংসের দিকে যায়। সেই ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তারপর আমাদের এগোতে হবে। অন্যথায় বারবার আমরা এই বিপদের সম্মুখীন হতেই থাকব। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বক্তব্য শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, সময়োপযোগীও। দল মতের উর্ধ্বে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুকে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘বাঙালির মুক্তির দূত’ শীর্ষক এক লেখায় বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়, সবারএটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। যারা তাকে মানতে চায়নি, তারা বাংলাদেশকেও মানতে পারেনি। তাদের সংখ্যা কিন্তু একেবারে কম নয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তিই পঁচাত্তরে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে দেশকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা আবার ফিরেছি প্রগতির পথে। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে যাব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের অগ্রযাত্রায় মূল শক্তি। এটাকে আমরা যত ছড়িয়ে দিতে পারব, ততই আমাদের বিভাজন কমবে। রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাপ্রতিষ্ঠাই ছিল তার স্বপ্ন। আমাদের দায়িত্ব হবে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। তাহলেই আমরা চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব’।

বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতির নন, তিনি বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা। নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর প্রিয় বাংলাদেশে সূচনা হলো কালো অধ্যায়ের। মুছে ফেলার চেষ্টা হলো বাঙালি রাষ্ট্রের পরিচয়টি। তাঁকে ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হলো। তাঁর সব অর্জনকে অস্বীকার করে তাঁর সব চিহ্ন মুছে ফেলার আয়োজন শুরু হলো। কিন্তু জাতির পিতা হিসেবে যাঁকে বাঙালি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যাঁকে ভালোবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়েছে; তাঁকে ভুলিয়ে দেওয়াটা কি সহজ কথা? ১৯৭৫এর কুশীলবরা মোটেই বুঝতে পারে নি, বঙ্গবন্ধু স্বমহিমায় আসীন হবেন তাঁর আসনে। বঙ্গবন্ধুকে মনে রেখেছে জনগণ। তাঁকে বুকে রেখে তাঁর আদর্শ ও তাঁর চিন্তাভাবনাকে মাথায় রেখে এভাবে এগিয়ে যাওয়া দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে মনে করে বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা।

বঙ্গবন্ধুকে কেবল জন্ম ও মৃত্যু উপলক্ষে স্মরণে আনবো না, প্রতিদিনই তাঁকে স্মরণে রাখা চাই। অনুপ্রেরণা নিতে চাই তাঁর থেকে। তাঁর ভাবনাচিন্তা ও দর্শন যত বেশি আমরা ধারণ করতে পারবো, জাতি হিসেবে তত বেশি সমৃদ্ধ হবো। তিনি মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর কর্মজীবন ও রাজনৈতিক দর্শন আমাদের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে তুলে ধরতে পারলে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিক যে দর্শন রেখে গেছেন, তা শতসহস্র বছর পরেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চলার পথের পাথেয় ও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে