প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম আসছেন আজ

সরকার প্রধান হিসাবে প্রথমবার আসছেন নিজ জেলায় । যোগ দেবেন চবির সমাবর্তনে । পরিদর্শন করবেন বন্দর । ভিত্তি স্থাপন করবেন নতুন কালুরঘাট সেতুর । যাবেন পৈতৃক বাড়ি । হস্তান্তর করবেন হার্ট ফাউন্ডেশনের জমির দলিল

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ মে, ২০২৫ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আজ প্রথমবার নিজ জেলা চট্টগ্রামে আসছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চট্টগ্রামে তিনি দিনব্যাপী বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আজ বুধবার প্রথমবারের মতো নিজ জেলায় এ সফর ভিন্ন মাত্রা বহন করছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে যোগদান পর্যন্ত দিনব্যাপী ব্যস্ততম এ সফরে থাকছে ভিন্নধর্মী ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কর্মসূচি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে আজ। সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন চবি থেকে তাকে সম্মানজনক ডক্টর অব লিটারেচার বা ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালটি তার পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামের পাশে অবস্থিত। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে ড. ইউনূস তার পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে আসবেন। নিজ এলাকার সন্তান প্রধান উপদেষ্টাকে বরণ করে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন স্থানীয়রা। পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা বিকাল ৫টায় তার পৈতৃক (হাজি মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর) বাড়ির অদূরে নুরালী বাড়ি উপডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত তার দাদাদাদির কবর জেয়ারত করবেন এবং পাশের মাঠে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বড় সমাবর্তন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলা হচ্ছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। এতে ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া ২২ জনকে পিএইচডি ও ১৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

অতিথি থাকবেন চার উপদেষ্টা। তারা হলেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এছাড়া ইউজিসির চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে সাজ সাজ অবস্থা বিরাজ করছে। মূল আয়োজনের জন্য চবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ২৫ হাজার মানুষ ধারণ ক্ষমতার বৃহৎ প্যান্ডেল করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি হল, অনুষদ ও প্রশাসনিক ভবন সাজানো হয়েছে নতুনরূপে। সর্বত্র লেগেছে সংস্কারের ছোঁয়া। গতকাল থেকেই সমবর্তী অনেক শিক্ষার্থী সমাবর্তন গাউন ও টুপি পরে পরিবারপরিজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি ছবি তুলছেন। দীর্ঘদিন পর দেখা, একে অপরের সঙ্গে মেতে উঠছেন খোশগল্পে।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন ও মতবিনিময় : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামে পৌঁছার পর প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করবেন এবং বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি৫ প্রাঙ্গণে একটি সভায় অংশ নেবেন। এরপর তিনি বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সেখান থেকে আসবেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। সার্কিট হাউস থেকে কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করবেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে নগরীর জলাবদ্ধতা এবং নগরীর অঙিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী সড়কের যানজট পরিস্থিতির বিষয়ে ব্রিফ করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের জমির কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন।

কালুরঘাট সেতুর ভিত্তি স্থাপন : চট্টগ্রামবাসীর প্রতীক্ষিত কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলকাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে আজ। আজ বুধবার সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্য দিয়ে চান্দগাঁওবোয়ালখালী ও পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্তত এক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।

ব্যস্ততার কারণে কালুরঘাটের পরিবর্তে সার্কিট হাউসে ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করা। তবে ভিত্তিপ্রস্তরের ফলকে নাম দিতে চাচ্ছেন না প্রধান উপদেষ্টা। ফলে প্রধান উপদেষ্টার নাম ছাড়াই ফলক তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট রেলকাম সড়ক সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, চট্টগ্রাম এবং কঙবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন রেলকাম সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১১ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১০০ ফুট। তবে নদীর ওপর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে মাত্র ৭০০ মিটার। উভয় পাশে সাড়ে চার কিলোমিটার করে ভায়াডাক্ট নির্মাণ হবে।

সমাবর্তন শেষে যাবেন পৈতৃক বাড়ি : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সময় শিক্ষকতা করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠান শেষে যাবেন পৈতৃক নিবাস ১৪ নং শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে। গ্রামে তার দাদাদাদির কবর জিয়ারত করবেন। সেখানে আত্মীয়স্বজন, শৈশবের বন্ধুবান্ধবসহ স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর সর্বশেষ ২০১৭ সালে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। এ সময় শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বাল্যবন্ধু মোহাম্মদ শফি। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম গ্রামের বাড়িতে আসছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদানকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অঙিজেনহাটহাজারী সড়কের দুই পাশ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআঁরার ইউনূস, আঁরার প্রত্যাশা
পরবর্তী নিবন্ধফের চালু কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিসিইউ