প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পদকজয়ী ছয় শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎ

আন্তর্জাতিক গণিত ও জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড

| মঙ্গলবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১:২৬ অপরাহ্ণ

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আন্তর্জাতিক গণিত ও জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে পদকজয়ী ছয় শিক্ষার্থী। তারা হলেন, ৩৬তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২৫এ ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আরিজ আনাস, নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী হামিম রহমান ও মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল শিক্ষার্থী ফারাবিদ বিন ফয়সাল এবং ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ২০২৫এ ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী জিতেন্দ্র বড়ুয়া, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থী জাওয়াদ হামীম চৌধুরী, ময়মনসিংহ জেলা স্কুল শিক্ষার্থী তাহসিন খান। তারা প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ এ মুনির হাসান, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক বুয়েট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তারিখ আরাফাত। বৈঠকে ছয় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা শোনেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তাদের কাছে সমস্যা সম্পর্কেও জানতে চান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তোমাদের কথা শুনে খুবই আনন্দিত হলাম। তোমরা নিজেরা আগ্রহী হয়ে এতদূর এগিয়েছো। তোমাদের উৎসাহ ও আগ্রহ থেকে আমরাও অনুপ্রাণিত হলাম। খবর বাসসের। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডগুলোতে ২০ বছরের কম বয়সী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি এমন শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতা করেন। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, ১১১ দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী ম্যাথ অলিম্পিয়াডে গোল্ড পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। অনেকেই গণিত, জীববিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে আন্তর্জাতিক লেভেলে প্রতিযোগিতা করে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। এসব অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি বড় নেটওয়ার্কে যুক্ত হোন। যার কারণে তারা আরও উৎসাহী হয়। অনেকে শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান। আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও যত্ন নেওয়া হলে, উৎসাহ দেওয়া হলে তারা অনেক ভালো করবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, অনেক দুর্গম এলাকা থেকেও শিক্ষার্থীরা ঢাকায় এসে প্রতিযোগিতা করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা মেধাবী, কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না। অনেক সময় অনেকে নির্বাচিত হলেও ঢাকায় আসতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসব অলিম্পিয়াডে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। পরীক্ষার খাতা দেখেন, প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করেন, আয়োজক হিসেবে কাজ করেন।

বৈঠকে অলিম্পিয়াড কমিটির কাছে তাদের অভিজ্ঞতা ও কর্মপরিকল্পনা জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, এ বছর প্রথম রাউন্ডে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে পরের ধাপে উঠে আসে। পরের ধাপগুলোতে ঢাকায় এনে ক্যাম্পিং আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের প্রবলেম সলভিং ক্লাস করানো হয় যাতে করে তারা প্রস্তুত হতে পারে। এভাবে ছয়জনকে চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক ম্যাথ অলিম্পিয়াডে পাঠানো হয়। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে সাড়ে ৪ ঘণ্টা করে দুদিন পরীক্ষা হয়। এর জন্য প্রস্ততি প্রয়োজন। রেজিস্ট্রেশন ফি, থাকাযাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সকল খরচের জন্য নিজেরা ব্যক্তি উদ্যোগে যোগাড় করেন বলে জানান তিনি। একটি বেসরকারি ব্যাংক আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলেও সেটি যথেষ্ট নয়তিনি বলেন।

একই কথা জানান বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার। তিনি বলেন, আমরা প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করি। পরীক্ষা দিয়ে ধাপে ধাপে সর্বশেষ চারজনকে চূড়ান্ত্ত করা হয়। তারাই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন। এ বছর ৮০টি দেশ অংশ নিয়েছে। আমাদের দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাছাইকরণ, পরীক্ষা, প্রস্তুতি সবকিছুই আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজ উদ্যোগে করেন। নিজেরা চাঁদা তুলেই সকল ব্যয় বহন করতে হয়, তিনি যোগ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা স্বেচ্ছায় এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন, কাজ করছেন এটা খুবই ইতিবাচক ঘটনা। মেধাবীদের বিশ্বমণ্ডলে তুলে ধরতে এবং আরও উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা করা যায় সেসব খতিয়ে দেখা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচন যত সহজ ভাবছি, তত সহজ নয় : তারেক রহমান
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬