প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৪

এমসি কলেজে ধর্ষিতা নববধূর জবানবন্দি কঠোর অবস্থানে সরকার

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানসহ ৪জনকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি তিনজন হলো অর্জুন লস্কর, রনি ও রবিউল। গতকাল রোববার ভোররাতে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে পুলিশ সাইফুরকে গ্রেপ্তার করে বলে শাহপরান থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

গতকাল ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে আরেক আসামি ছাত্রলীগ কর্মী অর্জুন লস্করকে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হবে। এছাড়া বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলার আরেক আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫) র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জ জেলা শহরের অনন্তপুর এলাকা থেকে গতকাল রাত ৮টায় তাকে আটক করে র‌্যাবের একটি দল। অভিযুক্ত রনির মামা ও চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী জানান, আনন্তপুর এলাকার একজন অ্যাডভোকেটের বাসায় রনি র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণ করেছে।

রনির পর মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউলকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তাতার করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। রবিউল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের বড় নগদী গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

এ ঘটনায় এমসি কলেজের দুই দারোয়ানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিকে গতকাল দুপুরে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনার শিকার সেই নববধূ। খবর বিডিনিউজের।

২ দারোয়ান বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন : ধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে দুই দারোয়ানকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ। সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন কলেজের প্রধান ফটকের দারোয়ান রাসেল মিয়া ও চৌকিদার সবুজ আহমদ রুহান।

অধ্যক্ষ বলেন, ঘটনা তদন্তে কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জবানবন্দি দিলেন সেই নববধূ : আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনার শিকার সেই নববধূ। গতকাল দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে তিনি জবাববন্দি দেন বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর আদালতের সহকারী কমিশনার প্রসিকিউশন অমূল্য কুমার।

তিনি জানান, দুপুরে পুলিশ ওই তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে আদালতে নিয়ে আসে। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি আদালতে ওই রাতের ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালত ২২ ধারায় তার জবানববন্দি লিপিবদ্ধ করে।

সরকার কঠোর অবস্থানে : ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল ‘প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় মানবতার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, দেশে আইন নিজস্ব গতিতে চলছে। বিচার বিভাগের উপরও সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। দেশের মানুষ দেখেছে, নিজ দলের সমর্থক কিংবা নেতারাও অপরাধী হলেও সরকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা দেয়নি। সিলেটে এমসি কলেজের ঘটনায়ও শেখ হাসিনা সরকার কঠোর অবস্থানে। অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না।

কাদের বলেন, রাজনীতির মাধ্যমে মানবকল্যাণই শেখ হাসিনার রাজনীতির দর্শন। তার রাজনীতির মূলমন্ত্র হলো জনগণের জীবনমান উন্নয়ন।

এছাড়া বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অভিযোগের পুরনো কৌশল নিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণও এক ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে আসা নববধূকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ওই নববধূ তার স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। এক পর্যায়ে তার স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য কলেজের গেটের বাইরে বের হন। এ সময় ৬ থেকে ৭ জন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় ধর্ষণ করে। এ সময় তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরুণীর শারিরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসাপাতালে উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, গাইনি বিভাগের এক অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে গৃহবধূর চিকিৎসা চলছে। তিনি শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ রয়েছেন।

শনিবার সকালে কৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন এমসি কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন লস্কর ও বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশুকে নির্মম নির্যাতন সৎ পিতা গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনে যাত্রীদের আতঙ্ক ‘পাথর নিক্ষেপ’